পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৬৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

607 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য ভারত ভিত্তিহীন প্রচারণা চালাচ্ছে -হামিদুল হক চৌধুরী পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও বিশিষ্ট এডভোকেট জনাব হামিদুল হক চৌধুরী নিম্নলিখিত বিবৃতি দিয়েছেনঃ পূর্ব পাকিস্তানীরা যাই চেয়ে থাক না কেন, তারা নিশ্চয়ই দেশের ঐক্য বানচালের পরিকল্পনা করেনি বা করে না। পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন এবং সম্প্রাসারণবাদী সুবিধার জন্য পাকিস্তানকে ধ্বংস করাই ভারতের প্রচারণার একমাত্র উদ্দেশ্য বলে মনে হচ্ছে। এই উদ্দেশ্য পূরণ এবং বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য সকল তথ্য মাধ্যমে বোমা বর্ষণ করে শহরসমূহকে ধ্বংস ও হাজার হাজার লোককে হত্যার মিথ্যা অভিযোগ বিশ্বের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। বস্তুতপক্ষে খবর ও অভিমতের ব্যাপারে ভারতীয় বেতার-সময়ের অর্ধেকটাই এই লক্ষ্য অর্জনে ব্যয় করা হচ্ছে। কতদিন এই ধরণের মিথ্যা টিকে থাকতে পারে। পূর্ব পাকিস্তানীরা কি চায় তা মাত্র ১২০ দিন আগে ঘোষিত হয়েছে-যখন সমগ্র প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যা একটি মাত্র জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোট দেন। জনগণ সমগ্র দেশকে (পূর্ব ও পশ্চিম) একটি ইউনিট গণ্য করে একটি মাত্র জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসাবে বসার জন্য তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছে একটি একক দেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য এবং পূর্ব ভারতীয় প্রচারণাকারীরা কি করে দাবী করেন যে পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় এবং সেই অর্থহীন তত্বের ভিত্তিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন দিতে শুরু করেছে। প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের ব্যক্তিদের পাকিস্তান অপেক্ষা ভারতে বেশী পাওয়া যাবে। প্রাণহানি হয়েছে, কারণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হতে বাধ্য, যখন আইন ও শৃঙ্খলা এমন এক পর্যায়ে ভেংগে পড়েছিল যা আমরা ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে দেখেছি। এটা খুবই দুঃখজনক এবং এটা এড়ানো প্রত্যেকেরই কাম্য। আমি আশা করি গোটা অঞ্চলের শান্তি এবং উভয় দেশের জনগণের কল্যাণের খাতিরে ভারত এই শক্ৰতামূলক পথ থেকে বিরত হবে। প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে ভারতের কোন সন্দেহ থাকলে এখানে তাদের কুটনীতিকদের কাছ থেকে তারা সহজেই তা জানতে পারেন। এই কুটনীতিকরা আবাসিক এলাকায় নিরাপদে বাস করছেন যে আবাসিক এলাকা ভারতের উর্বর বেতার ও প্রচারণাকারীদের মতে ভূমিসাৎ করা হয়েছে। এখন সকল শ্রেণীর জনগণের কর্তব্য হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনার ব্যাপরে দ্বিগুণ নিষ্ঠার সঙ্গে আত্মনিয়োগ করা। মার্চ মাসে তিন সপ্তাহ যাবৎ হরতালের ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। প্রত্যেক নাগরিকের প্রত্যেক সরকারের কাছে এই আশা করার অধিকার আছে যে তাদের জীবন, স্বাধীনতা এবং পেশা রক্ষিত হবে। যত শীঘ্ৰ সম্ভব বেসামরিক জনপ্রিয় সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এই প্রসংগে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিবৃতি অভিনন্দন যোগ্য। দৈনিক পাকিস্তান, ৭ এপ্রিল, ১৯৭।