পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৬৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

655 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড দেশের অখণ্ডতা রক্ষা ও শত্রর প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে হবে। দেশ রক্ষার জন্য জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। পাকিস্তান না থাকলে ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, কৃষক ও জনগণের কোনো কল্যাণ হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। অধ্যাপক গোলাম আজম বলেন যে, জন্মের পর থেকে পাকিস্তানের উপর দিয়ে দুটি বড় রকমের তুফান বয়ে গেছে। এর একটি হচ্ছে ১৯৬৫ সালে ভারতীয় হামলা আর অপরটি হচ্ছে এবারকার সংকট। তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের দুশমন ছিল বাইরের। তাই ভারতীয় হামলা থেকে দেশ রক্ষার জন্যে জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে হামলা মোকাবিলার জন্য তৈরী ছিল। কিন্তু এবার পাকিস্তানের ভেতরে হাজারো দুশমন সৃষ্টি হয়েছে। তাই এবারের সংকট কঠিন। কারণ বাইরের দুশমনের চেয়ে ঘরে ঘরে যে সব দুশমন রয়েছে তারা অনেক বেশি বিপজ্জনক। অধ্যাপক আজম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, গত ২৪ বছর যাবত পাকিস্তানের আদর্শের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। তাই আজ ঘরে ঘরে পাকিস্তানের দুশমন সৃষ্টি হয়েছে এবং এরা পাকিস্তানের পহেলা নম্বরের দুশমন ভারতকে তাদের বন্ধু বলে মনে করছে। এই জন্য বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে দায়ী করে তিনি বলেন যে, যারা পাকিস্তানে জন্ম নিয়ে দুশমন হয়েছে তাদেরকে দোষ দেয়া যায় না। বর্তমান শিক্ষা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেই এ জন্য দায়ী করতে হবে। কারণ পাকিস্তানকে যারা ভালোবাসে তাদেরকে তৈরী হওয়ার সুযোগ দিলে তারা দেশের জন্যে জান কোরবান করতো। সেনাবাহিনী ও শান্তি কমিটির মধ্যে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে জামায়াত নেতা বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য শান্তি কমিটি গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শান্তি কমিটি যদি দুনিয়াকে জানিয়ে না দিতো যে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ দেশকে অখণ্ড রাখতে চায় তবে মানুষকে বোঝানোর দায়িত্ব শান্তি কমিটির হাতে তুলে নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া ঘরে ঘরে যে সব দুশমন রয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করার উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। আজাদী দিবস উদযাপনের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক গোলাম আজম বলেন যে, এবার প্রাণচাঞ্চল্যতার সাথে আজাদী দিবস উদযাপিত হয়েছে। কারণ যারা পাকিস্তানকে সত্যিকারভাবে ভালোবাসেন তারা এবার আন্তরিকতা ও জাঁকজমকের সাথে আজাদী দিবস পালন করছে। শত্রু ও মিত্রের মানদণ্ডে এবার পাকিস্তান যেন নতুন করে জন্ম নিয়েছে। কায়েদে আযমের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন যে, পাকিস্তান টিকে থাকার জন্যে এসেছে। তবে পাকিস্তান টিকে থাকতে হলে এর আদর্শকে পুরোপুরি বাস্তবায়িত করতে হবে। তিনি বলেন, অত্যাচার ও অনাচারমুক্ত একটি সমাজ ব্যবস্থা কায়েমই ছিল পাকিস্তানের মহান উদ্দেশ্য। কিন্তু নানান স্বার্থের কারণে আমরা সে আদর্শের জলাঞ্জলি দিয়েছি। দেশপ্রেমিকদের উদ্দেশ্য করে অধ্যাপক গোলাম আজম বলেন, পাকিস্তান টিকে থাকলে আজ হোক কাল হোক বাঙ্গালী মুসলমানদের হক আদায় হবে। কিন্তু আজাদী ধ্বংস হলে মুসলমানদেরকে শৃগাল কুকুরের মতো মরতে হবে। নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান বলেন, আজ আমরা ইতিহাসের এক বৃহত্তম সংকটের মধ্যে এগিয়ে চলেছি। আমাদের এই সংকট ভেতর ও বাইরের উভয় দিক থেকে এসেছে। অভ্যান্তরীণ ক্ষেত্রে রয়েছে অন্তর্ঘাতী কাজে লিপ্ত ব্যক্তিরা আর বাহির থেকে দুশমনী করছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তানকে ধ্বংস করার জন্য ব্যাপক হারে মোহাজের পাঠিয়েছে এবং এখান থেকে হিন্দুদেরকে হিন্দুস্তানে চলে যাবার জন্য উস্কানি দিয়েছে। ১৯৬৫ সালে তারা বুলেট দ্বারা ষড়যন্ত্র করেছে আর ১৯৭০ সালে হয়েছে ব্যালটের ষড়যন্ত্র। এছাড়া তারা কলকাতাতে তথাকথিত বাংলাদেশের সরকার গঠন করে রেখেছে।