পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

বাদ দেওয়া যায় না। ‘কোন্‌’ বিশেষণ জড় চেতন দুইয়েই লাগে।

 সর্বনামের কর্মকারকে সাধারণত ‘কে’ বিভক্তি: আমাকে তোমাকে। ‘সে’র বেলায় ‘তাকে’ কিংবা ‘সেটিকে’ ‘সেটাকে’।

 বাংলা সর্বনাম করণকারকে একটা বিভক্তির উপরে আর-একটি চিহ্ন জোড়া হয়। বিভক্তিটা সম্বন্ধপদের, যেমন ‘আমার’, ওতে জোড়া হয় ‘দ্বারা’ শব্দ: আমার দ্বারা। আর-একটা শব্দচিহ্ন আছে ‘দিয়ে’। তার বেলায় মূলশব্দে লাগে কর্মকারকের বিভক্তি: আমাকে দিয়ে।

 ‘কী’ শব্দের করণকারকের রূপ: কিসে, কিসে ক’রে, কী দিয়ে, কিসের দ্বারা। অধিকরণেরও রূপ ‘কিসে’, যথা: এ লেখাটা কিসে আছে। এ-সমস্তই একবচনের ও অজীববাচকের দৃষ্টান্ত, এরা বহুবচনে হবে: এগুলোকে দিয়ে, সেগুলোকে দিয়ে, কোন্‌গুলোকে দিয়ে। অসম্মানে মানুষের বেলা হয়; নচেৎ হয়: এদের দিয়ে, তাদের দিয়ে, ওদের দিয়ে।

 সাধারণত বাংলায় বিশেষণপদের বহুবচনরূপ নেই। ওদের অধিকৃত বিশেষ্য শব্দগুলিতে বহুবচনের ব্যবস্থা করতে হয়, যথা: বুনো পশুদের, পিতলের ঘটিগুলোর। বলা বাহুল্য ‘ঘটিদের’ হয় না, ‘পশুদের’ হয়। ‘রা’ এবং ‘দের’ বিভক্তি জড়বাচক শব্দের অধিকারে নেই। তার পক্ষে ‘গুলো’ শব্দই বৈধ। অথচ ‘গুলো’ অপর পক্ষের ব্যবহারেও লাগে। কিন্তু পরিমাণবাচক ‘এত’ ‘তত’ ‘যত’ ‘কত’ বিশেষণের সঙ্গে বহুবচন-বিভক্তি গুলো যুক্ত হয়। তা ছাড়া ‘এ’ সে’ ‘যে’ ‘ও’ ‘ঐ’ ‘সেই’ ‘কোন্‌’ শব্দের সঙ্গে বহুবচনে কর্তৃপদে ‘গুলো’ ও কর্মকারকে বা সম্বন্ধে ‘দের’ যোগ করা হয়।

 বাংলা সর্বনামশব্দ-প্রয়োগে একটা খটকার জায়গা আছে।

 ‘আমাকে তোমাকে খাওয়াতে হবে’ এমন কথা শোনা যায়। কে কাকে খাওয়াবে তর্কটা পরিষ্কার হয় না। এমন স্থলে যিনি খাওয়াবার কর্তা তাঁকে সম্বন্ধ-আসনে বসালে কথাটা পাকা হয়।

৯৭