পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

লেগেছে, পাঁচজনে যা বলে। 'ঘোড়ে' বাংলায় নেই, আছে ঘোড়ায়: ঘোড়ায় লাথি মেরেছে।

  এই তির্যকরূপের ভিতর দিয়েই কারকের বিভক্তিগুলো তৈরি হয়েছে, আর হয়েছে বহুবচনের রূপ, যেমন: মানুষে থেকে, মানুষেরা, মানুষেতে, মানুষেদের। তোমা আমা যাহা তাহা থেকে: তোমার আমার যাহার তাহার তোমাকে আমাকে ইত্যাদি।

 এই তির্যকরূপের কর্তৃকারক এক সময়ে সাধারণ অর্থে ছিল: আপনে শিখায় প্রভু শচীর নন্দনে, সোই আপনে কর সেবা। প্রাচীন রামায়ণে দেখা যায় নামসংজ্ঞায় প্রায় সর্বত্রই এই তির্যকরূপ, যেমন: সুমিত্রায়ে কৌশল্যায়ে মন্থরায়ে লোমপাদে। এখন এর ব্যবহারে একটা বিশেষত্ব ঘটেছে। ‘বানরে কলা খায়’ বলে থাকি, ‘গোপালে সন্দেশ খায়’ বলি নে। বাংলার কোনো কোনো অংশে তাও বলে শুনেছি। ময়মনসিংহগীতিকায় আছে: কোনো দোষে দোষী নয় আমার সোয়ামিজনে।

 শ্রেণীবাচক কর্তৃপদে তির্যকরূপ দেখা যায়, অন্যত্র যায় না। 'বাঘে গোরুটাকে খেয়েছে’ বললে বোঝায়; বাঘজাতীয় জন্তুতে গোরুকে খেয়েছে, ভালুকে খায় নি। যখন বলি ‘রামে মারলেও মরব, রাবণে মারলেও মরব’, তখন ব্যক্তিগত রামরাবণের কথা বলি নে; তখন রামশ্রেণীয় আঘাতকারী ও রাবণশ্রেণীয় আঘাতকারীর কথা বলা হয়।

 'জন' শব্দের তির্যকরূপ 'জনা'। একো জনা একো রকমের: এই 'জনা’ বিশেষ একজনের সম্বন্ধে নয়, জনগুলি এক-একটি শ্রেণীগত। 'একহ’ শব্দ থেকে হয়েছে ‘একো'।

 মনে রাখা দরকার, কর্তৃপদের এই তির্যকরূপ জড় পদার্থে খাটে না। যখন বলি ‘মেঘে অন্ধকার করেছে' তখন বুঝতে হবে, 'মেঘে’ করণকারক।

 গৌড়ীয় ভাষার প্রাচীন ইতিহাসে দেখা যায়, শব্দরূপে সম্বন্ধ-পদের চিহ্নই প্রাধান্য পেয়েছিল। অবশেষে প্রয়োজনমতো তারই উপরে

১০০