পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

ব’লে থাকি 'ময়রা মালপো তৈরি করে’, ‘মালপোকে তৈরি করে' বলিই নে। কিন্তু অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলা অসম্ভব নয় যে: ময়রা মালপোকে করে তোলে জুতোর সুকতলা। মালপো তৈরি করা সাধারণ ময়রা কতৃক সাধারণ ব্যাপার; সুকতলার মতো মালপো তৈরি করাটা নিঃসন্দেহ সাধারণ ব্যাপার নয়।

 সর্বনামের প্রসঙ্গে করণকারকের নিয়ম পূর্বেই বলা হয়েছে। অন্য বিশেষ্যপদ সম্বন্ধেও প্রায় সেই একই কথা। দ্বারা দিয়ে ক’রে: এই তিনটে শব্দ করণকারকের প্রধান উপকরণ। সর্বনামের সঙ্গে অন্য বিশেষ্যপদের একটা প্রভেদ বিভক্তি নিয়ে; সর্বনামের কে, বিশেষ্যে এ। যথা: হাতে মারা ভালো ভাতে মারার চেয়ে, পৃথিবী পুরাবে তুমি ভরতের ধনে। সর্বনামে এই বিভক্তি বিকল্পে ‘য়’, যেমন: তোমায় দিয়ে। নিম্নের দৃষ্টান্তে কর্মকারকের চিহ্ন দেখি নে, যথা: মন দিয়ে শোনো, হাত দিয়ে খাও, লোক দিয়ে চিঠি পাঠাও। মন দিয়ে কাজ করো, বাজে কাজে হাত দিয়ো না: এখানে মনও নির্বস্তুক, হাতও তাই; এ হাত দৈহিক হাত নয়, এ হাত বলতে বোঝায় চেষ্টা। লোক দিয়ে চিঠি পাঠাও: এ লোক কোনো বিশেষ লোক নয়, সাধারণভাবে যাকে হোক কাউকে দিয়ে চিঠি পাঠাবার কথা হচ্ছে। ঘরামি দিয়ে চাল ছাইতে হবে: এখানে বিকল্পে 'ঘরামিকে দিয়েও' হয়। কিন্তু ব্যক্তিবাচক বিশেষ্যে কর্মকারকে ‘কে’ বিভক্তি থাকাই চাই; রামকে দিয়ে সই করিয়ে নিয়ো। মানুষ ছাড়া অন্য জীববাচক বিশেষ্য সম্বন্ধেও এই নিয়ম, যেমন: বাঁদরকে দিয়ে চাষ করানো চলে না, ধোবার গাধাকে দিয়ে ঘোড়দৌড় খেলাবে না কি।

 করণকারকে ‘ক’রে’ শব্দ অধিকরণরূপের সঙ্গে যুক্ত হয়: গ্লাসে ক’রে জল খাও, তুলিতে ক’রে আঁকো।

 করণকারকে ‘দিয়ে' আর ‘ক’রে’ শব্দে পার্থক্য আছে। ‘পাল্কিতে ক’রে' যাওয়া চলে, ‘পাল্কি দিয়ে' চলে না। খাবার বেলায় বলি হাতে ক’রে খাও; নেবার বেলায় বলি হাত দিয়ে নাও’।

১০২