পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

টাকা পেয়েছি' বলা চলে না, বলতে হয় 'বিপিনের কাছ থেকে টাকা পেয়েছি'। এর কারণ, অচেতন পদার্থের নামের সঙ্গেই 'থেকে' শব্দের সাক্ষাৎ সম্বন্ধ। তাই 'মেঘ থেকে' বৃষ্টি নামে, 'পাখি থেকে’ গান ওঠে না, 'পাখির কণ্ঠ থেকে' গান ওঠে।

 কেবল 'থেকে' নয়, 'হতে' শব্দ-প্রয়োগেও ঐ একই কথা। 'অযোধ্যা হতে' রাম নির্বাসিত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি দুঃখ পেয়েছিলেন ‘রাবণের কাছ হতে'।

 তুলনামূলক অর্থেও ব্যবহৃত হয়: হতে থেকে চেয়ে চাইতে। অন্য প্রসঙ্গে সম্বন্ধপদের আলোচনা হয়ে গেছে। এক কালে বহুবচনে সম্বন্ধপদের 'দিগের’ শব্দের পূর্বেও সম্বন্ধের আর-একটা বিভক্তি থাকত, যেমন ‘আমারদিগের’।

 বাংলা সম্বন্ধপদের একটা প্রত্যয় আছে ‘কার’। এর ব্যবহার সার্বত্রিক নয়। সময়বাচক ক্রিয়াবিশেষণে ‘এখন’, ‘তখন’ ‘যখন’ ‘কখন’এর সঙ্গে ‘কার’ জোড়া হয়। বিশেষ কোনো 'বেলাকার’ 'দিনকার' 'রাতকার’ও চলে। 'আজ' এবং ‘কাল’ শব্দে কর্মকারকের বিভক্তির সঙ্গে যোগ ক’রে ওর ব্যবহার: আজকেকার কালকেকার। ‘পর্শুকার’, অমুক 'হপ্তাকার’ বা ‘বছরকার’ হয়, কিন্তু অমুক ‘মাসকার’ কিংবা অমুক 'ঘণ্টাকার’ হয় না। ‘সকলকার’ হয়, ‘সমস্তকার’ হয় না। ‘সত্যকার’ হয়, “মিথ্যাকার’ হয় না। ভিতরকার বাহিরকার উপরকার নিচেকার এদিককার ওদিককার এধারকার ওধারকার— চলে। ব্যক্তি বা বস্তুবাচক শব্দ সম্পর্কে এর ব্যবহার নেই। ‘জন’ শব্দ যোগে সংখ্যাবাচক শব্দে 'কার' প্রয়োগ হয়: একজনকার দুজনকার। কিন্তু 'জন' ছাড়া মনুষ্যবাচক আর-কোনো শব্দের সঙ্গে ওর যোগ নেই। 'ইংরেজকার’ বলা চলে না।

১০৪