পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

 পূর্বেই বলেছি বাংলাভাষার প্রধান লক্ষণ, তার ভঙ্গীর প্রাবল্য। উপরোক্ত শ্রেণীর ক্রিয়াপদে একটা অনর্থক ‘গে’ শব্দের যোগে যে ইঙ্গিত প্রকাশ করা হয় সেটা সহজ শব্দের দ্বারা হয় না, যথা: হোকগে করুকগে মরুকগে। এতে ঔদাসীন্যে ও ক্ষোভে জড়িয়ে যে ভাবটা ব্যক্ত করে সেটা অন্য ভাষায় সহজে বলা যায় না। কেননা গে শব্দের কোনো অর্থ নেই, ওটা একটা মুদ্রা। ‘হোকগে’ শব্দের ইংরেজি তর্জমা করতে হলে বলতে হয়: Let it happen, I don’t care. ওর সঙ্গে ‘তুমিও যেমন’ যদি যোগ করা যায় তা হলে ভঙ্গিমা আরও প্রবল হয়ে ওঠে। ইংরেজি বাক্যে হয়তো এর কাছাকাছি যায়: Oh let it be, don’t bother. মোটের উপর এই শব্দভঙ্গীর ভাবখানা এই যে, যা হচ্ছে বা করা হচ্ছে সেটা ভালো নয়, সেটা ক্ষতিকর, বা অপ্রিয়, কিন্তু তবু ওটাকে গ্রাহ্য করার দরকার নেই। ‘মরুকগে’ শব্দে এই ভাষাভঙ্গী খুবই স্পষ্ট হয়েছে। এই ছোট্ট বাংলা শব্দটির ইংরেজি প্রতিবাক্য: Hang it, let it go to the dogs.

 ইংরেজিতে সাধারণ ব্যবহারের ক্রিয়াপদ অনুজ্ঞায় প্রায়ই এক মাত্রার হয়, যেমন, run, stop, cut, beat, shoot, march, hold, throw. যেখানে যুগ্ম ক্রিয়াপদ ব্যবহার হয় সেখানে এক মাত্রায় দুটি শব্দ জোড়া লাগে, যেমন: come in, go out, cut down, stand up, run on ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, এইরুপ সংক্ষিপ্ত শব্দে আজ্ঞার জোর পৌঁছয়। স্কা‌উটের বা ফৌজের কুচকাওয়াজে ইংরেজিতে যে-সব আদেশবাক্য আছে এই কারণে সেগুলো জোরালো হয়। যে-সকল শব্দ ব্যঞ্জনবর্ণে‌ শেষ হয় তারা ধাক্কা দেয় জোরে। stand up শব্দ উভয়ে মিলে দুই মাত্রার বটে কিন্তু তাতে দুই ব্যঞ্জনবর্ণের দুটো ঠোকর আছে।

 ‘দাঁড়াও’ শব্দটাও দুই মাত্রার, কিন্তু তার আগাগোড়া স্বরবর্ণ‌, তাদের স্প‌র্শ‌ মোলায়েম। কথাটা ধাঁ করে ছোটে না।

 ‘তুই’ ‘তোরা’ বগের অনুজ্ঞায় এই দুর্ব‌লতা নেই। বোস্‌ ওঠ্‌

১০৯