পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

‘কেহ’ শব্দে। চলতি ভাষায় ‘কেও’ থেকে ক্রমে ‘কেউ’ হয়েছে। পুরাতন সাহিত্যে ‘কেহ‍ু’ পাওয়া যায়, ‘তেঁহ’ শব্দটা আজ হয়েছে ‘তিনি’। ‘ওহ’ নেই কিন্তু সাধু ভাষায় ‘উহা’ আছে। ‘যেহ’ নেই, আছে ‘যাহা’। এই শেষ দুটি বিশেষণ অপ্রাণী সম্পর্কে।

 যোজক ‘ও’র উৎপত্তি ফার্সি ঊঅ (অন্ত্যস্থ ব) শব্দ থেকে, সুতরাং and’-এর প্রতিশব্দরূপে এর ব্যবহার অবৈধ নয়। কিন্তু তবু ভাষায় ভালো করে মিশ খায় নি। তুমি ও আমি একসঙ্গেই যাব: এ খাঁটি বাংলা নয়। আমরা সহজে বলি: তুমি আমি একসঙ্গেই যাব। কেউ কেউ মনে করেন ‘অপি’ থেকে ‘ও’ হয়েছে, কিন্তু স্বরবিকারের নিয়ম অনুসারে সেটা সম্ভব কি না সন্দেহ করি।

 রাজাও চলেছে সন্ন্যাসীও চলেছে: এ খাঁটি বাংলা। কিন্তু ‘রাজা ও সন্ন্যাসী চলেছে’ কানে ঠিক লাগে না। সে এগোয়ও না পিছোয়ও না: ‘ও’ শব্দের এই যথার্থ ব্যবহার। সে এগোয় না ও পিছোয় না: এ বাক্যটা দুর্বল।

 তুমিও যেমন, হবেও-বা: এ-সব জায়গায় ‘ও’ ভাষাভঙ্গীর সহায়তা করে।

 দেখা যায় ‘এবং’ শব্দটাকে দিয়ে আমরা অনেক স্থানে and শব্দের অনুকরণ করাই। He has a party of enemies and they vilify him in the newspapers. এ বাক্যটা ইংরেজি মতে শ‍ুদ্ধ, কিন্তু আমরা যখন ওরই তর্জমা করে বলি ‘তাঁর একদল শত্রু, আছে এবং ওরা খবরের কাগজে তাঁর নিন্দে করে’, তখন বোঝা উচিত এটা বাংলারীতি নয়। আমরা এখানে ‘এবং’ বাদ দিই। He has enemies and they are subsidised by the government. এই বাক্যটা তর্জমা করবার সময় ফস্ করে বলা অসম্ভব নয় যে: তাঁর শত্রু আছে এবং তারা সরকারের বেতনভোগী। কিন্তু ওটা ঠিক হবে না, ‘এবং’ পরিত্যাগ করতে হবে। বাক্যের এক অংশে ‘থাকা’, আর-এক অংশে ‘হওয়া’; এদের মাঝখানে

১১৩