পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

‘এবং’ মধ্যস্থতা করবার অধিকার রাখে না। তিনি হচ্ছেন পাকা জোচ্চোর, এবং তিনি নোট জাল করেন: ইংরেজিতে চলে, বাংলায় চলে না।

 ‘সে দরিদ্র এবং সে মূর্খ’ এ চলে, ‘সে চরকা কাটে. এবং ধান ভেনে খায়’ এও চলে। কারণ প্রথম বাক্যের দুই অংশই অস্তিত্ববাচক, শেষ বাক্যের দুই অংশই কর্তৃত্ববাচক। কিন্তু ‘সে দরিদ্র এবং সে ধান ভেনে খায়’ এ ভালো বাংলা নয়। আমরা বলি: সে দরিদ্র, ধান ভেনে খায়। ইংরেজিতে অনায়াসে বলা চলে: She is poor and lives by husking rice.

 প্রয়োগবিশেষে ‘যে’ সর্বনামশব্দ ধরে অব্যয়র‍ূপ, যেমন: হরি যে গেল না। ‘যে’ শব্দ ‘গেল না’ ব্যাপারটা নির্দিষ্ট করে দিল। তিনি বললেন যে, আজই তাঁকে যেতে হবে: ‘তাঁকে যেতে হবে’ বাক্যটাকে ‘যে’ শব্দ যেন ঘের দিয়ে স্বতন্ত্র করে দিলে। শুধু উক্তি নয় ঘটনাবিশেষকেও নির্দিষ্ট করা তার কাজ, যেমন: মধু যে রোজ বিকেলে বেড়াতে যায় আমি জানতুম না। মধু বিকেলে বেড়াতে যায়, এই ব্যাপারটা ‘যে’ শব্দের দ্বারা চিহ্নিত হল।

 আর-একটা অব্যয় শব্দ আছে ‘ই’। ‘ও’ শব্দটা মিলন জানায়, ‘ই’ শব্দ জানায় স্বাতন্ত্র্য। ‘তুমিও যাবে’, অর্থাৎ মিলিত হয়ে যাবে। ‘তুমিই যাবে’, অর্থাৎ একলা যাবে। ‘সে যাবেই ঠিক করেছে', অর্থাৎ তার যাওয়াটাই একান্ত। ‘ও’ দেয় জুড়ে ‘ই’ ছিঁড়ে আনে।

 বক্রোক্তির কাজেও ‘ই’কে লাগানো হয়েছে: কী কাণ‍্ডই করলে, কী বাঁদরামিই শিখেছ। ‘কী শোভাই হয়েছে’ ভালোভাবে বলা চলে, কিন্তু মন্দভাবে বলা আরও চলে। এর সঙ্গে ‘টা’ জুড়ে দিলে তীক্ষ্ণতা আরও বাড়ে, যেমন: কী ঠকানটাই ঠকিয়েছে। আমরা সোজা ভাষায় প্রশংসা করে থাকি: কী চমৎকার, কী সুন্দর। ওর সঙ্গে একটু-আধটু ভঙ্গিমা জুড়ে দিলেই হয়ে দাঁড়ায় বিদ্রূপ।

 ‘তা’ শব্দটা কোথাও সর্বনাম কোথাও অব্যয়। তুমি যে না বলে

১১৪