পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

যাওয়া, হাড়ে হাড়ে বজ্জাতি, ঘেন্না পিত্তি, বুদ্ধির ঢেঁকি, পাড়া মাথায় করা; তুলো ধুনে দেওয়া, ঘোল খাইয়ে দেওয়া, হেসে কুরুক্ষেত্র, হাসতে হাসতে পেটের নাড়ি ছোঁড়া, কিল খেয়ে কিল চুরি, আদায় কাঁচকলায়, আহ্লাদে আটখানা: এমন বিস্তর আছে।

 বাংলায় অনেক জোড়া শব্দ আছে যার এক অংশে অর্থ, অন্য অংশে নিরর্থকতা। তাতে করে অর্থের চারি দিকে একটা ঝাপসা পরিমণ্ডল সৃষ্টি করা হয়েছে; সেই জায়গাটাতে যা তা কল্পনা করবার উপায় থাকে।

 আমরা বলি ‘ওষুধপত্র’। ‘ওষুধ’ বলতে কী বোঝায় তা জানা আছে, কিন্তু ‘পত্রটা’ যে কী তার সংজ্ঞা নির্ণয় করা অসম্ভব। ওটুকু অব্যক্তই রেখে দেওয়া হয়েছে, সুতরাং ওতে অনেক কিছুই বোঝাতে পারে। হয়তো ফীভার‍্মিক্‌শ্চারের সঙ্গে মকরধ্বজ, ডাক্তারের প্রেস‍্ক্রিপ‍্শন, থর্মমীটর, কুইনীনের বড়ি, হোমিয়োপ্যাথি ওষুধের বাক্স। হয়তো তাও নয়। হয়তো কেবলমাত্র দু বোতল ডি-গ‍ুপ্ত। এমনি ‘মালপত্র’ ‘দলিলপত্র’ ‘বিছানাপত্র’ প্রভৃতি শব্দে ব্যক্ত অব্যক্তের যুগলমিলন।

 আর-একরকম জোড়মেলানো শব্দ আছে যেখানে দুই ভাগেরই এক মানে, কিংবা প্রায় সমান মানে; যেমন ‘লোকলস্কর’। এই ‘লস্কর’ শব্দে সব জায়গাতেই যে ফৌজ বোঝাবেই তা নয়; প্রায় ওতে ‘লোক’ শব্দের অর্থের সঙ্গে অনির্দিষ্ট লোকসঙ্ঘের ব্যাপকতা বোঝায়। অন্যরকম করে বলতে গেলে হয়ত বলতুম, হাজার হাজার লোক চলেছে; অথচ গ‍ুণে দেখলে হয়ত আড়াইশো’র বেশি লোক পাওয়া যেত না।

 খুব ‘চড়চাপড়’ লাগালে: ওর মধ্যে চড়টা সুনিশ্চিত, চাপড়টা অনিশ্চিত। ওটা কি তবে একবার গালে চড়, একবার পিঠে চাপড়। খুব সম্ভব তা নয়। তবে কি অনেকগুলো চড়। হতেও পারে।

 মারাধরা, মারধোর: বর্ণিত ঘটনায় শ‍ুধু হয়তো মারাই হয়েছিল

১১৯