পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

ব্যাপী শব্দের দ্বিতীয় বর্ণে হসন্ত লাগিয়ে শেষ অক্ষরে একটা স্বরবর্ণ জুড়ে শব্দটাকে তাল পাকিয়ে দেওয়া। যথা ক্রিয়াপদে: ছিট‍্কে পড়া, কাৎরে ওঠা, বাৎলে দেওয়া, সাঁৎরে যাওয়া, হন‍্হনিয়ে চলা, বদ‍্লিয়ে দেওয়া, বিগ‍্ড়িয়ে যাওয়া।

 বিশেষ্যপদে; কাৎলা ভেট‍্কি কাঁক‍্ড়া শাম‍্লা ন্যাক‍্ড়া চাম‍্চে নিম‍্কি চিম‍্টে টুক‍রি কুন‍্কে আধ‍্লা কাঁচ‍্কলা সক‍্ড়ি দেশ‍্লাই চাম‍্ড়া মাট‍্কোঠা পাগ‍্লা পল‍্তা চালতে গাম‍্লা আম‍্লা।

 বিশেষণ, যেমন: পুঁচ‍্কে বোট‍্কা আল‍্গা ছুট‍্কো হাল‍্কা বিধ‍্কুটে পাৎলা ডান‍্পিটে শুট‍্কো পান‍্সা চিম‍্সে।

 এই হসন্তবর্ণের প্রভাবে আমাদের চলতি ভাষায় যুক্তবর্ণের ধ্বনিরই প্রাধান্য ঘটেছে।

 আরও গোড়ায় গেলে দেখতে পাই, এটা ঘটতে পেরেছে অকারের প্রতি ভাষার উপেক্ষাবশত।

 সংস্কৃত ভাষার উচ্চারণের সঙ্গে বাংলা উচ্চারণ মিলিয়ে দেখলে প্রথমেই কানে ঠেকে অ স্বরবর্ণ নিয়ে। সংস্কৃত আ স্বরের হ্রস্বরুপ সংস্কৃত অ। বাংলায় এই হ্রস্ব আ অর্থাৎ অ আমাদের উচ্চারণে আ নাম নিয়েই আছে; যেমন: চালা কাঁচা রাজা। এ-সব আ এক মাত্রার চেয়ে প্রশস্ত নয়। সংস্কৃত আ’কারযুক্ত শব্দ আমরা হ্রস্বমাত্রাতৃেই উচ্চারণ করি, যেমন ‘কামনা’।

 বাংলা বর্ণমালার অ সংস্কৃত স্বরবর্ণের কোঠায় নেই। ইংরেজি star শব্দের a সংস্কৃত আ, ইংরেজি stir শব্দের i সংস্কৃত অ ইংরেজি ball শব্দের a বাংলা অ। বাংলায় ‘অল্পসল্প’র বানান যাই হোক, ওর চারটে বর্ণেই সংস্কৃত অ নেই। হিন্দিতে সংস্কৃত অ আছে, বাংলা অ নেই। এই নিয়েই হিন্দুস্থানি ওস্তাদের বাঙালি শাকরেদরা উচ্চ অঙ্গের সংগীতে বাংলা ভাষাকে অস্পৃশ্য বলে গণ্য করেন।

৬০