পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

 বাংলা অ যদিও বাংলাভাষার বিশেষ সম্পত্তি তবু এ ভাষায় তার অধিকার খুবই সংকীর্ণ। শব্দের আরম্ভে যখন সে স্থান পায় তখনি সে টিঁকে থাকতে পারে। ‘কলম’ শব্দের প্রথম বর্ণে অ আছে, দ্বিতীয় বর্ণে সে ‘ও’ হয়ে গেছে, তৃতীয় বর্ণে সে একেবারে লপ্ত। ঐ আদিবর্ণের মর্যাদা যদি সে অব্যাঘাতে পেত তা হলেও চলত, কিন্তু পদে পদে আক্রমণ সইতে হয়, আর তখনি পরাস্ত হয়ে থাকে। ‘কলম’ যেই হল ‘কল‍্মি’, অমনি প্রথম বর্ণের আকার বিগড়িয়ে হল ও। শব্দের প্রথমস্থিত অকারের এই ক্ষতি বারে বারে নানা রূপেই ঘটছে, যথা: মন বন ধন্য যক্ষ হরি মধু মসৃণ। এই শব্দগলিতে আদ্য অকার ‘ও’ স্বরকে জায়গা ছেড়ে দিয়েছে। দেখা গেছে, ন বর্ণের পূর্বে তার এই দুর্গতি, ক্ষ বা ঋ ফলার পূর্বেও তাই। তা ছাড়া দুটি স্বরবর্ণ আছে ওর শত্রু, ই আর উ। তারা পিছনে থেকে ঐ আদ্য অ’কে করে দেয় ও, যেমন: গতি ফণী বধূ যদু। য ফলার পূর্বেও অকারের এই দশা, যেমন: কল্য মদ্য পণ্য বন্য। যদি বলা যায় এইটেই স্বাভাবিক তা হলে আবার বলতে হয়, এ স্বভাবটা সর্বজনীন নয়। পূর্ববঙ্গের রসনায় অকারের এ বিপদ ঘটে না। তা হলেই দেখা যাচ্ছে, অকারকে বাংলা বর্ণমালায় স্বীকার করে নিয়ে পদে পদে তাকে অশ্রদ্ধা করা হয়েছে বাংলাদেশের বিশেষ অংশে। শব্দের শেষে হসন্ত তাকে খেদিয়েছে, শব্দের আরম্ভে সে কেবলই তাড়া খেতে থাকে। শব্দের মাঝখানেও অকারের মুখোষ প’রে ওকারের একাধিপত্য, যথা: খড়ম বালক আদর বাঁদর কিরণ টোপর চাকর বাসন বাদল বছর শিকড় আসল মঙ্গল সহজ। বিপদে ওর একমাত্র রক্ষা সংস্কৃত ভাষার করক্ষেপে, যেমন: অ-মল বি-জন নী-রস কু-রঙ্গ স-বল দুর্-বল অন্-উপম প্রতি-পদ। এই আশ্রয়ের জোরও সর্বত্র খাটে নি, যথা: বিপদ বিষম সকল।

 মধ্যবর্ণের অকার রক্ষা পায় য় বর্ণের পূর্বে, যথা: সময় মলয় আশয় বিষয়।

৬১