পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

মিঠে ডাঁসা কষা খাসা তোফা কাঁচা পাকা খাঁটি মেকি কড়া চোখা রোখা ভিজে হাজা শুকো গুঁড়ো বড়ো ওঁচা খেলো ছ্যাঁদা ঝঁটো ভীতু উঁচু নিচু কালা হাবা বোকা ঢ্যাঙা বেঁটে ঠুঁটো ঘনো।’

 বাংলা বর্ণমালায় ই আর উ সবচেয়ে উদ্যমশীল স্বরবর্ণ। রাসায়নিক মহলে অক্সিজেন গ্যাস নানা পদার্থের সঙ্গে নানা বিকার ঘটিয়ে দিয়ে নিজেকে রুপান্তরিত করে, ই স্বরবর্ণটা সেইরকম। অন্তত আ’কে বিগড়িয়ে দেবার জন্যে তার খুব উদ্যম, যেমন: থলি+আ=থ’লে, করি+আ=ক’রে। ইআ প্রত্যয়ের ই পূর্ববর্তী একটা বর্ণকে ডিঙিয়ে শব্দের আদি ও অন্তে বিকার ঘটায়, তার দৃষ্টান্ত: জাল+ইআ=জেলে, বালি+ইআ=বেলে, মাটি+ইআ=মেটে, লাঠি+ইআল=লেঠেল।

 পরে যেখানে আকার আছে ই সেখানে আ’এ হাত না দিয়ে নিজেকেই বদলে ফেলেছে, তার দৃষ্টান্ত যথা: মিঠাই=মেঠাই, বিড়াল=বেড়াল, শিয়াল=শেয়াল, কিতাব=কেতাব, খিতাব=খেতাব।

 আবার নিজেকে বজায় রেখে আকারটাকে বিগড়িয়ে দিয়েছে, তার দৃষ্টান্ত দেখো: হিসাব=হিসেব, নিশান=নিশেন, বিকাল=বিকেল, বিলাত=বিলেত। ই কোনো উৎপাত করে নি এমন দৃষ্টান্তও আছে, সে বেশি নয়, অল্পই, যেমন: বিচার নিবাস কৃষাণ পিশাচ।

 একদা বাংলা ক্রিয়াপদে আ স্বরবর্ণের যথেষ্ট প্রতিপত্তি ছিল। করিলা চলিলা করিবা যাইবা: এইটেই নিয়ম ছিল। ইতিমধ্যে ই উপদ্রব বাধিয়ে দিলে। নিরীহ আকারকে সে শান্তিতে থাকতে দেয় না; ‘দিলা’কে করে তুলল ‘দিলে’, ‘করিবা’ হল ‘করবে’।

 বাংলা ক্রিয়াপদের সদ্য অতীতে ইল প্রত্যয়ে বিকল্পে ও এবং এ লাগে, যেমন: করলো করলে। করিল’ হয়েছে ‘করলো’, ইকারের সঙ্গে সম্বন্ধ ছিন্ন করে। ‘করিলা’ থেকে ‘করলে’ হয়েছে ইকারের শাসন মেনেই, অথাৎ আ’কে নিকটে পেয়ে ই তার যোগে একটা এ

৬৪