পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

সন্দেহ করি। বাংলাদেশের মেয়েদের ‘সবিতা’ নাম দেখে প্রায়ই আশঙ্কা হয় ‘পিতা’কে পাছে কেউ এই নিয়মে মাতা ব’লে গণ্য করে। মেয়েদের নামে ‘চন্দ্রমা’ শব্দেরও ব্যবহার দেখেছি, আর মনে পড়ছে কোনো দুর্যোগে ভগবান চন্দ্রমা স্ত্রীছদ্মবেশে বাঙালির ঘরেও দেখা দিয়েছেন, বাঙালির কাব্যেও অবতীর্ণ হয়েছেন। এ দিকে নীলিমা তনিমা প্রভৃতি পুংলিঙ্গ শব্দ আকারের টানে মেয়েদের নামের সঙ্গে এক মালায় গাঁথা পড়ে। ‘নিভা’ নামক একটা ছিন্নমুণ্ড শব্দ ‘শরচ্চন্দ্রনিভাননা’ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যুক্ত হয়েছে বাঙালি মেয়েদের নামমালায় আকারের টিকিট দেখিয়ে।

 স্ত্রীলিঙ্গের কোনো একটি বা একাধিক প্রত্যয় যদি নির্বিশেষে বা বাঁধা নিয়মে ভাষায় খাটত তা হলে একটা শৃঙ্খলা থাকত, কিন্তু সে সুযোগ ঘটে নি। বাংলায় ‘উট’ হয়তো 'উটী’, কিন্তু ‘মোষ’ হয় না ‘মোষী’, এমন-কি ‘মোষিনী’ও না—কী হয় বলতে পারি নে, বোধ করি ‘মাদী মোষ’। ‘হাতি’ সম্বন্ধেও ঐ এক কথা, ‘নাতনী’ বলি কিন্তু ‘হাতিনী’ বলি নে। উট-হাতির চেয়ে কুকুর-বিড়াল পরিচিত জীব, ‘কুকুরী’ ‘বিড়ালী’ বললেই চলত, কিংবা ‘কুকুরনী’ ‘বিড়ালনী’। বলা হয় না। মানুষ সম্বন্ধেও কেমন একটা ইতস্তত আছে — ‘খোট্টানি’ ‘উড়েনি’ ব’লে থাকি, কিন্তু ‘পাঞ্জাবিনী’ ‘শিখিনী’ ‘মগিনী’ বলি নে; ‘মাদ্রাজিনী’ও তদ্রুপ: ‘বাঙালিনী’ বলি নে, ‘কাঙালিনী’ বলে থাকি।

 আত্মীয়তা সম্বন্ধের নামগুলিতে স্ত্রী প্রত্যয়ের ছাপ আছে: দিদি মাসি পিসি শ্যালী শাশুড়ি ভাইঝি বোনঝি। ‘ননদ’ শব্দে ইনী যোগ না করলেও তার প্রভাব সম্পূর্ণ থেকে যায়। জা শ্যালাজ প্রভৃতি শব্দে দীর্ঘ ঈকারের সমাগম নেই।

 জাতঘটিত ব্যাবসাঘটিত নামে নী ইনী যথেষ্ট চলে: বাম্‌নী কায়েতনী। অন্য জাত সম্বন্ধে সন্দেহ আছে। ‘বন্দিনী’ কখনো শুনি নি। ‘বাগদিনী’ চলে, ‘ডেমিনী’ ‘হাড়িনী’ও শুনেছি,

৮৩