পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা পরিচয়

কায়দা বা ‘ইংরেজিনী’ রাষ্ট্রনীতি বলতে গৌরব বোধ করবেন এমন আশঙ্কা থেকে যায়।


১৪

 বাংলা বিশেষ্যপদে বহুবচনের প্রভাব অল্পই। অধিকাংশ স্থলেই ‘সব’ ‘গুলি’ ‘সকল’ প্রভৃতি শব্দ জোড়া দিয়ে কাজ চালানো হয়। এ ভাষায় সর্বনাম শব্দে বহুবচনের বিভক্তি যতটা চলে অন্যত্র ততটা নয়। বহুবচনে ‘মানুষেরা’ ব’লে থাকি অথচ 'ঘোড়ারা’ বলতে কানে ঠেকে অথচ 'ঘোড়াদের’ বলা চলে। মোটের উপর এ কথা খাটে যে সচেতন জীবদের নিয়ে বহুবচনে রা এবং সম্বন্ধে ও কর্মকারকে দের চিহ্ন ব্যবহার হয়ে থাকে। ‘মোষেরা খুব বলবান জীব’ বা 'ময়ূরদের পুচ্ছ লম্বা’ এটা নিয়মবিরুদ্ধ নয়। এই রা চিহ্ন সাধারণ বিশেষ্যে লাগে। বিশেষ বিশেষ্যে ওর প্রয়োগ কানে বাধে। বলতে পারি ‘ঐ মোষরা পাঁকে ডুবে আছে’, কিন্তু ‘ঐ মোষগুলো পাঁকে ডুবে আছে’ বললেই মানানসই হয়। ‘মোষরা’ বললে মোষজাতিকে মনে আসে, মোষগুলো বললে মনে আসে বিশেষ মোষের দল।

 মানুষরা নিষ্ঠুরতায় পশুকে হার মানালো’ ঠিক শোনায়, এও ঠিক শোনায়: কুলিগুলো নির্দয়ভাবে গাড়িতে বোঝা চাপিয়েছে। কিন্তু ‘মানুষগুলো পশুকে হার মানায়’ অশুদ্ধ। সাধারণ বিশেষ্যে রা চলে কিন্তু বিশেষ বিশেষ্যে গুলো। ‘মানুষরা ওখানে জটলা করছে’ বললে মনে হয় যেন জানানো হচ্ছে অন্য কোনো জীব করে নি। এখানে ‘মানুষগুলো’ বললেই সংশয় থাকে না।

  ‘টেবিলরা' ‘চৌকিরা’ নিষিদ্ধ। জড়পদার্থের ‘গুলো’ ছাড়া গতি নেই। আর-একটা শব্দ আছে, কথার পূর্বে বসে সমষ্টি বোঝায়, যেমন ‘সব’: সব চৌকি, সব জন্তু, সব মানুষ। কিন্তু এখানে এই শব্দ কেবলমাত্র বহুবচন বোঝায় না, সঙ্গে সঙ্গে একটা

৮৫