পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

ঝোঁক দেয়। সব চৌকি সরিয়ে দাও, অর্থাৎ একটাও বাকি রেখো না। সব ভিখিরিই বাঙালি, অথাৎ নির্বিশেষে বাঙালি। ‘সব’ প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে ‘গুলো’ প্রয়োগটাও যোগ দিতে চায়, যেমন: সব চৌকিগুলোই ভাঙা, সব ভিখিরিগুলোই চেঁচাচ্ছে। এখানে ‘সব’ বোঝাচ্ছে একান্ততা, আর ‘গুলো’ বোঝাচ্ছে বহুবচন। বহুবচনে এক সময়ে ‘সব’ ব্যবহৃত হত। কবিতায় এখনো দেখা যায়, যেমন: পাখিসব তোমাসব ইত্যাদি। আমরা বলি: কাফ্রিরা সব কালো। বহুবচনের রা বিভক্তির সঙ্গে জোড়া লাগে ‘সব’ শব্দ: এরা সব গেল কোথায়। শুধু ‘এরা গেল কোথায়’ বললেই চলে, কিন্তু সব’ শব্দের দ্বারা সমটির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই ‘সব’ শব্দ একবচনকে বহুবচন করে না, বহুবচনকে সুনির্দিষ্ট করে। ‘সবাই’ শব্দে আরও বেশি জোর লাগে: এরা যে সবাই চলে গেছে, কিংবা চৌধুরীদের সবাইকেই নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। ‘সব’ শব্দের সমাথক হচ্ছে ‘সকল’: এরা সকলেই চ’লে গেছে, কিংবা, চৌধুরীদের সকলকেই নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। কিন্তু ‘সকল’ শব্দের প্রয়োগ ‘সব’ শব্দের চেয়ে সংকীর্ণ।

 এই প্রসঙ্গে আমাদের ভাষার একটা বিশেষ ভঙ্গীর কথা বলি। ‘সব’ শব্দের অথে কোনো দুষণীয়তা নেই, ‘যত’ সর্বনাম শব্দটাও নিরীহ। কিন্তু দুটোকে এক করলে সেই জুড়িশব্দটা হয়ে ওঠে নিন্দার বাহন। ‘মূর্খ’ ‘কু’ড়ে’ কিংবা 'লক্ষ্মীছাড়া’ প্রভৃতি কটুস্বাদ বিশেষণ ঐ “যত সব’ শব্দটাকে বাহন ক’রে ভাষায় যেন মখে সিটকোতে আসে, যথা: যত সব বাঁদর, কিংবা কুড়ে, কিংবা লক্ষ্মীছাড়া। এখানে বলা উচিত ঐ ‘যত’ শব্দটার মধ্যেই আছে বিষ। “যত বাঁদর এক জায়গায় জুটেছে’ বললেই যথেষ্ট অকথ্য বলা হয়। লক্ষ্য করবার বিষয়টা এই যে, ‘যত’ শব্দটা একটা অসম্পূর্ণ সর্বনাম, ‘তত’ দিয়ে তবে এর সম্পণূর্তা। ‘তত’ বাদ দিলে ‘যত’ হয়ে পড়ে বেকার, লেগে যায় অনর্থক গালমন্দর কাজে।

 বাংলা ভাষায় সর্বনামের খুব ঘটা। নানা শ্রেণীর সবনাম, যথা

৮৬