পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

দুটি জুড়ি ছিল: এবে যবে। তারা পদ্যে আশ্রয় নিয়েছে। ‘তবে’ একদা ওদেরই দলে ছিল, কিন্তু এখন ‘তবু’ শব্দের মতো সেও অর্থ বদলিয়েছে। একটা সন্তাবনার সঙ্গে আর-একটা সম্ভাবনাকে সে জোড়ে, যেমন: যদি যাও তবে বিপদে পড়বে। তবে এক কাজ করো: ‘তবে’ শব্দের পূর্ববর্তী ঊহ্য ব্যাপারের প্রসঙ্গে কোনো কাজ করার পরামর্শ।

 এই প্রসঙ্গে ‘সবে’ শব্দটার উল্লেখ করা যেতে পারে। বলে থাকি: সবে এইমাত্র চলে গেছে, সবে পাঁচটা বেজেছে। এখানে ‘সবে’ অব্যয়, ওতে মাত্রা বোঝায়, সকল ক্ষেত্রেই পরিমাণের সীমা বোঝাতে তার প্রয়োগ: সবে পাঁচজন। সবে ভোর হয়েছে: অর্থাৎ সময়ের মাত্রা ভোরে এসে পৌঁচেছে। সেইরকম: সবে এক পোওয়া দুধ।

 যেমন তেমন অমন এমন কেমন তুলনাবাচক। ‘কেমনে’ শব্দের ব্যবহার পদ্যে করণকারকে। ‘কেমন’ শব্দের দ্বৈতে সন্দেহ বোঝায়: কেমন কেমন ঠেকছে। গা কেমন কেমন করছে: একটা অনির্দিষ্ট অসুস্থ ভাব। ‘কেমন’ শব্দের সঙ্গে ‘যেন’-যোগে সংশয় ঘনীভূত হয়, আর সে সংশয়টা অপ্রিয়। লোকটাকে কেমন যেন ঠেকছে: অর্থাৎ ভালো ঠেকছে না। ভঙ্গীওয়ালা ‘কেমন’ শব্দটা আছে খোঁচা দেবার কাজে: কেমন জব্দ, কেমন মার মেরেছে, কেমন জুতো, কেমন ঠকানটাই ঠকিয়েছে।

 অধিকরণের বাহনরূপে ‘এমনি’ শব্দের ব্যবহার আছে: এমনিতেই জায়গা পাই নে। খোঁচা দেবার ভঙ্গীতেও এই শব্দটার যোগ্যতা আছে: এমনিই কী যোগ্যতা।

 ‘যত’ শব্দ তার জুড়ি হারালে টিটকারির কাজে লাগে সে কথা পূর্বেই বলেছি। ‘অত’ কথাটারও তীক্ষ্মতা আছে, যেমন: অত চালাকি কেন, অত বাবুগিরি তোমাকে মানায় না, অত ভালোমানুষি করতে হবে না।

 এ জাতীয় আরও দৃষ্টান্ত আছে, যথা ‘যে’ এবং ‘যেমন’। ‘সে’ এবং তেমন’এর সঙ্গে যদি বিচ্ছেদ ঘটানো যায়, তবে মুখ বাঁকানোর

৯৩