পাতা:বাংলাভাষা পরিচয়-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাভাষা-পরিচয়

ভঙ্গী আনে, যথা: যে মধুর বাক্য তোমার। ‘তেমন’ এর সঙ্গবর্জিত ‘যেমন’ শব্দটাও বদমেজাজি: যেমন তোমার বুদ্ধি।

 এই ধরনেরই আর-একটা দৃষ্টান্ত মনে পড়ে: কোথাকার মানুষ হে। এ বাক্যটার চেহারা প্রশ্নেরই মতো, কিন্তু উত্তরের অপেক্ষা রাখে না। এতে যে সংবাদ ঊহ্য আছে সে নিবাসঘটিত নয়, সে হচ্ছে লোকটার ধৃষ্টতার বা মূর্খতার পরিচয় নিয়ে। কোথাকার সাধুপুরুষ এসে জুটল: লোকটার সাধুতা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ হচ্ছে না।

 ‘যেমতি’ ‘তেমতি’ পদে আশ্রয় নিয়েছে। ‘সেইমতো’ ‘এইমতো’ এখনো টিঁকে আছে। কিন্তু ‘এর মতো’ ‘তার মতো’র ব্যবহারটাই বেশি। করণকারকে রয়ে গেছে ‘কোনোমতে’। অথচ ‘কোনোমতো’ বা ‘কোনমতো’ শব্দটা নেই।

 ‘কেন’ শব্দটা সর্বনাম। এর অর্থ প্রশ্নবাচক, এর রূপটা করণ-কারকের। ঘটনা ঘটল কেন: অর্থাৎ ঘটল কী কারণের দ্বারা। ‘কেনে বা’ প্রাচীন কাব্যেও পড়েছি, গ্রাম্য লোকের মুখেও শোনা যায়।

 কেন, কেন বা, কেনই বা। ‘লোকটা কেন কাঁদছে’ এ একটা সাধারণ প্রশ্ন। ‘কেন বা কাঁদছে’ বললে কান্নাটা যে ব্যর্থ বা অবোধ্য সেইটে বলা হল। কেন বা এলে বিদেশে: অর্থাৎ বিদেশে আসাটা নিষ্ফল। কেনই বা মরতে এখানে এলুম: এ হল পরিতাপের ধিক্কার। এর মধ্যে লক্ষ্য করবার বিষয় এই যে, এই প্রয়োগগুলির সবগুলোই অপ্রিয়তাব্যঞ্জক। কেন তিনি তিব্বতি পড়ছেন তা নিজেই জানেন না: এ সহজ কথা। যেই বলা হল ‘কেনই বা তিনি তিব্বতি পড়তে বসলেন’ অমনি বোঝা যায়, কাজটা সুবুদ্ধির মতো হয় নি।

 ‘কেন’ শব্দের এক বর্গের শব্দ ‘যেন’ ‘হেন’। ‘যেন’ সাদৃশ্য বোঝাতে। ‘হেন’ শব্দের প্রয়োগ বিশেষণে, যথা: হেন রূপ দেখি নাই কভু, হেন কাজ নেই যা সে করতে পারে না, সে-হেন লোকও তেড়ে এল। হেন কাজ=এমন কাজ। সে হেন=তার মতো।

 ‘যেন’ শব্দটাতে বিদ্রুপের ভঙ্গী লাগানো চলে: যেন নবাব খাঞ্জে

৯৪