পাতা:বাংলার ব্রত - অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার ব্ৰত ‘VORS) পূজা ক'রে বরপ্রার্থনা করছে না। সে যে-আন্দরটি কামনা করছে সেটি একটি জীবন্ত প্ৰতিমার মধ্যে ধরে দেখবার আয়োজন করছে। সত্যি এক স্বামীসোহাগিনীকে সামনে বসিয়ে বসনভূষণে সাজিয়ে যেমন আদর সে নিজে কামনা করছে তেমনি আদর তার মূতিমতী কামনাকে অৰ্পণ করছে এবং জানছে যে এতেই তার আদর পাওয়ার কামনা চরিতার্থ হবে নিশ্চয় । এইখানে ব্ৰত আর পুজোতে তফাত । মেয়েলি ব্ৰতগুলির সাব-কটি খাটি অবস্থায় পাওয়া যায় না । কালে কালে তাদের এত ভাঙচুর অদলবদল উলটোপালটা হয়ে গেছে যে, কোনটা পুজো কোনটা ব্ৰত ধরতে হলে আদর্শ ব্ৰতের লক্ষণগুলির সঙ্গে মিলিয়ে না দেখলে গোলে পড়তে হয়। খাটি ব্ৰতের লক্ষণ মোটামুটি এই বলে নির্দেশ করা যেতে পারে ; প্রথমত, খাটি ব্ৰতে ব্ৰতীর কামনার সঙ্গে ব্ৰতের সমস্তটার পরিষ্কার সাদৃশ্য থাকা চাই ; দ্বিতীয়ত, ব্রত হতে হলে একের কামনা অথবা একের মনের দোলা দশকে দুলিয়ে একটা ব্যাপার হয়ে নাচে গানে ভোজে ইত্যাদিতে অনুষ্ঠিত হওয়া দরকার । কামনা এবং তার চরিতার্থতার জন্য ক্রিয়া যখন একেরই মধ্যে কিংবা অসংহতভাবে দশের মধ্যে ছাড়াছাড়ি অবস্থায় রইল। তখন সেই একেরই সঙ্গে বা একে-একে দশের সঙ্গে তার লোপ হয়ে গেল । কিন্তু এক ভাব এক ক্রিয়া যখন সমস্ত জাতিকে প্রেরণা দিলে তখন সেটি ব্ৰত হল, এবং বেঁচেও রইল দেখি । আমাদের একটা ভুল ধারণা ব্ৰত সম্বন্ধে আছে। আমরা মনে করি যে, আমাদের পূর্বপুরুষের ধর্ম ও নীতি শেখাতে মেয়েদের জন্যে আধুনিক কিণ্ডারগার্টেন প্ৰণালীর মতো ব্ৰত-অনুষ্ঠানগুলি আবিষ্কার করে গেছেন। শাস্ত্রীয় ব্ৰতগুলি কতকটা তাই বটে, কিন্তু আসল মেয়েলি ব্ৰত মোটেই তা নয় । এগুলি আমাদের পূর্বপুরুষেরও পূৰ্বেকার পুরুষদের-তখনকার, যখন শাস্ত্ৰ হয় নি, হিন্দুধর্ম বলে একটা ধর্মও ছিল না এবং যখন ছিল লোকেদের মধ্যে কতকগুলি অনুষ্ঠান, যেগুলির নাম ব্ৰত ।