পাতা:বাংলার ব্রত - অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

98 Ras SVS ষোলো ষোলো বাতির হাতে ষোলো সারা দিয়া, মোরা যাই ইন্দ্রপুরীর নাটুয়া হইয়া । এর পরে রাত্রি শেষ ; মেয়েরা আপন-আপন শসপাতার সারা মাথায় নিয়ে পুকুরে কিংবা নদীতে বিসর্জন দিয়ে ঘরে আসে। এখানে শস্যের উদগমের কামনা সরাতে শস্যবপন-ক্রিয়া থেকে আরম্ভ হল এবং অনুষ্ঠান শেষ হল। উৎসবের নৃত্যগীতে । কিন্তু দুঃখের দিনও বছরের মধ্যে আসে যখন পাতা ঝরে যায়, মাটি তেন্তে ওঠে, জল ফুরিয়ে যায়। সেই-সব দিনে মনের বিষয়তার ছবিও ব্ৰতে ফুটেছে দেখি। সেদিনের বসুধারা ব্ৰতের ছড়ায় কেবল “জাল আর জল’ । কালবৈশাখী আগুন করে । কালবৈশাখী রোদে পোড়ে । গঙ্গা শুকু-শুকু, আকাশে ছাই । উৎসাহ নেই, স্মৃতি নেই, কেবল দীর্ঘশ্বাসের মতো ছড়াটুকু হতাশ জানাচ্ছে। অনাবৃষ্টির আশঙ্কা আমাদের যদিই বা এখন কোনোদিন চঞ্চল করে তবে হয়তো 'হরি হে রক্ষা করো’ বলি মাত্র ; কিন্তু ঋতুবিপর্যয়ের মানে যাদের কাছে ছিল প্ৰাণসংশয়, - সেই তখনকার মানুষরা কোনো অনিদিষ্ট দেবতাকে প্রার্থনা কেবল মুখে জানিয়ে তৃপ্ত হতে বা নিশ্চিন্ত হতে পারত না ; সে ‘বৃষ্টি দাও” বলে ক্ষান্ত হচ্ছে না ; সে বৃষ্টি সৃষ্টি করতে, ফসল ফলিয়ে দেখতে চলছে। এবং সে নিশ্চয় জানিছে, বৃষ্টি কামনা করে দল বেঁধে তারা মাটির ঘটকে মেঘরূপে কল্পনা করে শিকের খোচায় ফুটাে করে বট পাকুড় ইত্যাদি। গাছের মাথায় জলধারা দিয়ে যে বস্তুবারা ব্ৰতটি করছে, তাতে করে বৃষ্টির দাতা যে দেবতা তিনি তুষ্ট হচ্ছেন এবং এই প্রক্রিয়ার বলে মেঘও জল দিতে বাধ্য। এখনকার মানুষ এরকম বিশ্বাস করে না, ব্ৰত করে না । কিন্তু তখনকার লোকে যে-বিশ্বাসে ব্রত করত তার মূলে যে-কামনা এখনো পূজায় বা প্রার্থনাতে সেই কামনা, কেবল অনুষ্ঠানটা ভিন্ন রকমের ; ব্ৰতে কামনার সঙ্গে অনুষ্ঠানের স্পষ্ট সম্পর্ক দেখি, যেমন