পাতা:বাংলার ব্রত - অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলার ব্ৰত লৌকিক ব্ৰতের সরলতাও প্রায় নষ্ট হয়ে পূজারি ব্ৰাহ্মণ এবং সামান্যকাণ্ডের জটিল অনুষ্ঠান ন্যাসমুদ্রা তন্ত্রমন্ত্রই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। কুমারী ব্ৰত এই ব্ৰতগুলিই অনেকখানি খাটি অবস্থায় পাওয়া যায়। এদের গঠন এইরূপ-আহরণ, যেমন ব্রত করতে যা যা লাগবে তা সংগ্ৰহ করা ; আচরণ, যেমন কামনার প্রতিচ্ছবি, আলপনা দেওয়া, পুকুরকাটা ইত্যাদি এবং কামনা জানিয়ে কামনার প্রতিচ্ছবি বা প্ৰতিকৃতিতে ফুল ধরা, শেষে যদি কোনো ব্ৰতকথা থাকে তো সেটা শোনা, নয়তো ফুল ধরেই শেষ কামনা জানিয়ে ব্ৰত সাঙ্গ। পূজারি এবং তন্ত্রমন্ত্রের জায়গাই এখানে নেই। বেশ বোঝা যায়, হিন্দুধর্মের সুলভ সংস্করণ হিন্দুব্রতমালাবিধান চিনির ডেলার আকারে যেন কুইনাইন পিল। লোকের মধ্যে হিন্দুধর্মের জটিল অনুষ্ঠান এবং নানা দেবদেবীর মাহাত্ম্য প্রচারের উদ্দেশ্যে তন্ত্র ও পুরাণকে ব্ৰতের ছাঁচ দিয়ে রচনা করা হয়েছে । খাটি পুরাণগুলির ইতিহাস হিসাবে একটা দাম আছে। কিন্তু, এই শাস্ত্রীয় ব্ৰতগুলি না পুরাতন আচার-ব্যবহারের চর্চার বেলায় না লোকসাহিত্য বা লৌকিক ধৰ্মাচরণের অনুসন্ধানের সময় কাজে লাগে। লোকের সঙ্গে এই ব্ৰতগুলির খুব কম যোগ, লোকের চেষ্টা লোকের চিন্তার ছাপ। এই শাস্ত্রীয় ব্ৰতগুলি মোটেই নয়। ছাঁচটা এদের ব্ৰতের মতো হলেও জোড়াতাড়ি দেওয়া কৃত্ৰিম পদার্থে যে জড়তা সেটা শাস্ত্রীয় ব্ৰতগুলির সমস্তটার মধ্যে লক্ষ করা যায়। যজুঃ এবং সামবেদের অনেক মন্ত্র ও অনুষ্ঠান এই ব্ৰতগুলিতে থাকলেও বৈদিক ক্রিয়ার সঙ্গে এগুলির কলের পুতুলে আর জীবন্ত মানুষের মতো প্ৰভেদ, শুধু তাই নয়, যে লৌকিক ব্ৰতের ছদ্মবেশে এগুলিকে সাজানো হয়েছে সেই খাটি মেয়েলি ব্ৰতগুলির সঙ্গেও এদের ওই একই রকম প্ৰভেদ । খাটি মেয়েলি ব্ৰতগুলিতে, তার ছড়ায় এবং আলপনায় একটা জাতির মনের, তাদের চিন্তার, তাদের চেষ্টার ছাপ পাই । বেদের সুক্তিগুলিতেও সমগ্ৰ আৰ্যজাতির একটা চিন্তা, তার উদ্যম-উৎসাহ