পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
বাংলা শব্দতত্ব

অকারান্ত উচ্চারণ করি।[১] বস্তুত বাংলায় অকারান্ত বিশেষ্য শব্দ অতি অল্পই দেখা যায়, অধিকাংশই বিশেষণ; যথা, বড় ছােট মাঝ (মাঝে মেঝাে) ভাল কাল খাট (ক্ষুদ্র) জড় (পুঞ্জীকৃত) ইত্যাদি।

  বাকি অনেকগুলা বিশেষণই আকারান্ত; যথা, কাঁচা পাকা বাঁকা তেড়া সােজা সিধা সাদা মােটা মুলা বােবা কালা ন্যাড়া কানা তিতা মিঠা উচা বােকা ইত্যাদি।

আ প্রত্যয়

পূর্বোক্ত আকারান্ত বিশেষণগুলিকে আ প্রত্যয়যােগে নিষ্পন্ন বলিয়া অনুমান করিতেছি। সংস্কৃত শব্দ কাণ, বাংলায় বিশেষণ হইবার সময় কানা হইল, হইতে মড়া হইল, মহৎ হইতে মােটা হইল, সিত হইতে সাদা হইল। এই আকারগুলি উচ্চারণের নিয়মে আপনি আসে নাই। বিশেষণে হলন্ত প্রয়ােগ বর্জন করিবার একটা চেষ্টা বাংলায় আছে বলিয়াই যেখানে সহজে অন্য কোনাে স্বরবর্ণ জোটাইতে পারে নাই, সেই-সকল স্থলে আ প্রত্যয় যােগ করিয়াছে। সংস্কৃত ভাষার ‘স্বার্থে ক’ বাংলায় আ প্রত্যয়ের আকার ধারণ করিয়াছে। ঘােটক ঘােড়া, মস্তক মাথা, পিষ্টক পিঠা, কণ্টক কাঁঁটা, চিপিটক চিঁঁড়া, গােপালক গােয়ালা, কুলক কুলা।

  বাংলায় অনেক শব্দ আছে যাহা কখনাে বা স্বার্থে আ প্রত্যয় গ্রহণ করিয়াছে, কখনাে করে নাই; যেমন তক্ত তক্তা, বাঘ বাঘা, পাট পাটা, ল্যাজ ল্যাজা, চোঙ চোঙা, চাঁঁদ চাঁঁদা, পাত পাতা, ভাই ভাইয়া (ভায়া,) বাপ বাপা, থাল থালা, কালাে কালা, তল তলা, ছাগল ছাগলা, বাদল বাদলা, পাগল পাগ‌্লা, বামন বাম্‌না, বেল (ফুল) বেলা, ইলিশ ইল্‌শা (ইল্‌শে)।

  এই আ প্রত্যয়যােগে অনেক স্থলে অবজ্ঞা বা অতিপরিচয় জ্ঞাপন করে, বিশেষত মানুষের নাম সম্বন্ধে; যথা, রাম রামা, শাম শামা, হরি হরে (হরিয়া), মধু মােধো (মধুয়া), ফটিক ফট্‌কে (ফট্‌কিয়া)।

  দ্রষ্টব্য এই যে, সকল নামে আ প্রত্যয় হয় না; যাদবকে যাদ‌্‌বা, মাধবকে

  1. বাংলা অ অনেক স্থলেই হ্রস্ব ওকারের ন্যায় উচ্চারিত হয়। আমরা লিখি যত, উচ্চারণ করি যত; লিখি বড়, উচ্চারণ করি বড়ো। উড়িয়ায় বড় বাঙালির বড়-র সহিত তুলনা করিলে দুই অকারের প্রভেদ বুঝা যাইবে।