পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাংলা ব্যাকরণ

তর্কের বিষয়টা কী, অধিকাংশ সময়ে তাহা বুঝিবার পুর্বেই তর্ক বাখিয়া যায়। সেটা যতই কম বােঝা যায়, তর্কের বেগ ততই প্রবল হয়; অবশেষে খুনাখুনি রক্তপাতের পর হঠাৎ বাহির হইয়া পড়ে, দুই পক্ষের মধ্যে মতের বিশেষ অনৈক্য নাই। অতএব ঝগড়াটা কোন্‌খানে, সেইটে আবিষ্কার করা একটা মস্ত কাজ।

 আমি কতকগুলা বাংলা প্রত্যয় ও তাহার দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করিয়া তাহা বিচারের জন্য ‘পরিষৎ’-সভার হস্তে সমৰ্পণ করিয়াছিলাম।[১] আমার সে-লেখাটা এখনো পরিষৎ-পত্রিকায় বাহির হয় নাই, সুতরাং আমার তরফে বক্তব্য পাঠকের সম্মুখে অনুপস্থিত। শুনিয়াছি, কোন্ সুযোগে তাহার প্রুফটি সংগ্রহ করিয়া লইয়া কোন্ কাগজে তাহার প্রতিবাদ বাহির হইয়া গেছে।[২] আমার সাক্ষী হাজির নাই, এই অবকাশে বাদের পুর্বেই প্রতিবাদকে পাঠকসভায় উপস্থিত করিয়া একতরফা মীমাংসার চেষ্টা করাকে ঠিক ধর্মযুদ্ধ বলে না।

 এখন সে লইয়া আক্ষেপ করা বৃথা।

 বাংলায় জল হইতে জোলা, মদ হইতে মােদো, পানি হইতে পান্তা, নুন হইতে নােন্তা, বাঁদর হইতে বাঁদরাম, জ্যাঠা হইতে জ্যাঠাম প্রভৃতি চলিত কথাগুলি হইতে উয়া, তা, আম প্রভৃতি প্রত্যয় সংকলন করিয়া ভাবী ব্যাকরণকারের সম্মুখে উপস্থিত করিয়াছিলাম। ব্যাকরণ তাঁহারাই করিবেন, আমার কেবল মজুরিই সার। সেই মজুরির জন্য যে অল্প একটুখানি বেতন আমার পাওনা আছে বলিয়া আমি সাধারণের কাছে মনে মনে দাবি করিয়াছিলাম, তাহা নামঞ্জুর হইয়া গেলেও বিশেষ ক্ষতিবােধ করিতাম না। সম্প্রতি দাঁড়াইয়াছে এই যে, ভিক্ষায় কাজ নাই, এখন কুত্তা বুলাইয়া লইলে বাঁচি।

 এখন আমার নামে উলটা অভিযােগ আসিয়াছে যে, আমি এই চলিত

  1. দ্রষ্টব্য “বাংলা কৃৎ ও তদ্ধিত” প্রবন্ধ
  2. শরচ্চন্দ্র শাস্ত্রী, “নূতন বাংলা ব্যাকরণ”,ভারতী, অগ্রহায়ণ ১৩০৮