পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলা ব্যাকরণ
১০৯

 অপর পক্ষে বলিতে পারেন,যেখানে সংস্কৃত-বাংলায় যথার্থ প্রভেদ ঘটিয়াছে, সেখানে প্রভাে মানিতে রাজি আছি; কিন্তু যেখানে প্রভেদ নাই, সেখানে তাে ঐক্য স্বীকার করিতে হয়। যেমন সংস্কৃত ভাষায় ইন্ প্রত্যয়যােগে ‘বাস’ হইতে ‘বাসী’ হয়, তেমনই সেই সংস্কৃত ‘ইন্’ প্রত্যয়ের যােগেই বাংলা দাগ হইতে দাগী হয়— বাংলা প্রত্যয়টাকে কেহ যদি ই প্রত্যয় নাম দেয় তবে সে অন্যায় করে।

 আমরা বলিয়াছিলাম বটে যে, চাষি, দামি, দাগি, যােকানি প্রভৃতি শব্দ সংস্কৃত ইন্ প্রত্যয়যােগে নহে, বাংলা ই প্রত্যয়যােগে হইয়াছে। কেন বলিয়াছিলাম বলি।

 জিজ্ঞাস্য এই যে, বাসী শব্দ যে প্রত্যয়যােগে ঈ গ্রহণ করিয়াছে, তাহাকে ঈ প্রত্যয় না বলিয়া ইন্ প্রত্যয় কেন বলা হইয়াছে। ইন্ প্রত্যয়ের ন্-টা মাঝে মাঝে ‘বাসিন্’ ‘বাসিনী’ রূপে বাহির হইয়া পড়ে বলিয়াই তাে! যদি কোথাও কোনাে অবস্থাতেই সে ন্ না দেখা যায় তবু কি ইহাকে ইন্ প্রত্যয় বলি। ব্যাঙাচির লেজ ছিল বটে, কিন্তু সে লেজটা খসিয়া গেলেও কি ব্যাঙকে লেজবিশিষ্ট বলিতে হইবে। কিন্তু পণ্ডিতমশায় বলেন, সংস্কৃত মানী শব্দও তো বাংলায় ‘মানিন্’ হয় না। আমাদের বক্তব্য এই যে, কেহ যদি সেইভাবে কোথাও ব্যবহার করেন, তাঁহাকে কেহ একঘরে করিবে না; অন্তত মানী শব্দের স্ত্রীলিঙ্গে মানিনী' হইয়া থাকে। কিন্তু স্ত্রীবিদ্যালয়ের মসীচিহ্নিত বালিকাকে যদি ‘দাগিনী’ বলা যায়, তবে ছাত্রীও হাঁ করিয়া থাকিবে, তাহার পণ্ডিতও টাকে হাত বুলাইবেন।

 তখন বৈয়াকরণ পণ্ডিতমশায় উলটিয়া বলিবেন, দাগ কথাটা যে বাংলা কথা, ওটা তো সংস্কৃত নয়, সেইজন্য স্ত্রীলিঙ্গে তাহার ব্যবহার হয় না। ঠিক কথা, যেমন বাংলায় বিশেষণ শব্দ স্ত্রীলিঙ্গরূপ পরিত্যাগ করিয়াছে, তেমনই বাংলায় ইন্ প্রত্যয় তাহার ন্ বর্জন করিয়া ই প্রত্যয় হইয়াছে।

 ভালাে, একটি সংস্কৃত কথাই বাহির করা যাক। ভার শব্দ সংস্কৃত। তবু আমাদের মতে ‘ভারি’ কথায় বাংলা ই প্রত্যয় হইয়াছে, সংস্কৃত ইন্ প্রত্যয় হয় নাই। তাহার প্রমাণ এই যে ‘ভারিণী নৌকা’ লিখিতে পণ্ডিতমশায়ের কলমও দ্বিধা করিবে। ইহার কারণ আর কিছুই নয়, মানী কথাটা প্রত্যয় সমেত সংস্কৃত ভাষা হইতে পাইয়াছি, ভারি কথাটা পাই নাই; আমাদের