পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శిe বাংলা শৰাতত্ত্ব কয়টাকে লইয়া স্বরের মতো ব্যবহার করিয়াছে। সে-স্থর বাহার কানে অভ্যস্ত হইয়াছে সে-ই তাহার স্বল্পতম মর্মটুকু বুঝিতে পারে । উল্লিখিত উদাহরণগুলিতে লক্ষ করিবার বিষয় আর-একটি আছে। আদ্যক্ষরে যেখানে অকার আছে সেইখানে পরবর্তী অক্ষরে আকার-যোজন চলে, অন্তত্র নহে । যেমন টকটক হইতে টকাটক হইয়াছে, কিন্তু টিকটিক হইতে টিকাটিক বা ঠুকঠুক হইতে কাঠক হয় না। এইরূপে মনোযোগ করিলে দেখা যাইবে, বাংলা ভাষার উচ্চারণে স্বরবর্ণগুলির কতকগুলি কঠিন বিধি আছে। স্বরবর্ণ আকারকে আবার আর-এক জায়গায় প্রয়োগ করিলে আর-এক রকমের স্বর বাহির হয় ; তাহার দৃষ্টান্ত, টুকটাক ঠুকঠাক খুটখাট ভুটভাট দুড়দাড় কুপকাপ গুপগাপ ঝুপঝাপ টুপটাপ ধুপধাপ হপহপ দুমদাম ধুমধাম ফুসফাস হুসহস । এই শব্দগুলি দুই প্রকারের ধ্বনিব্যঞ্জন করে, একটি অস্ফুট আর-একটি ফুট । যখন বলি, টুপটাপ করিয়া বৃষ্টি পড়িতেছে তখন এই বুঝায় ষে, ছোটো ফোটাটি টুপ করিয়া এবং বড়ো ফোটাটি টপ করিয়া পড়িতেছে, ঠুকঠাক শব্দের অর্থ একটা শব্দ ছোটো আর-একটা বড়ো । উকারে অব্যক্তপ্রায় প্রকাশ, আকারে পরিস্ফুট প্রকাশ । আমরা এতক্ষণ যে-সকল জোড়াকথার দৃষ্টান্ত লইয়া আলোচনা করিলাম তাহারা বিশুদ্ধ ধ্বন্তাত্মক। আর-একরকমের জোড়াকথা আছে তাহার মূলশব্দটি অর্থস্থচক এবং দোসর শব্দটি মূলশবেরই অর্থহীন বিকার ; যেমন, চুপচাপ ঘুষঘাষ তুকতাক ইত্যাদি। চুপ ঘুষ এবং তুক এ-তিনটে শব্দ আভিধানিক, ইহারা অর্থহীন ধ্বনি নহে ; ইহাদের সঙ্গে চাপ ঘাষ ও তাক, এই তিনটে অর্থহীন শব্দ শুদ্ধমাত্র ইঙ্গিতের কাজ করিতেছে। জলের ধারেই যে-গাছটা দাড়াইয়া আছে সেই গাছটার সঙ্গে সঙ্গে তাহার সংলগ্ন বিকৃত ছায়াটাকে একত্র করিয়া দেখিলে যেমন হয়, বাংলা ভাষার এই কথাগুলাও সেইরূপ : চুপ কথাটার সঙ্গে তাহার একটা বিকৃত ছায়া যোগ করিয়া দিয়া চুপচাপ হইয়া গেল। ইহাতে অর্থেরও একটু অনির্দিষ্টভাবের বিস্তৃতি হইল। যদি বলা যায় কেহ চুপ করিয়া আছে, তবে বুঝায় সে নিঃশব্দ হুইয়া আছে ; কিন্তু যদি বলি চুপচাপ আছে, তবে বুঝায় লোকটা কেবলমাত্র