পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SWSe বাংলা শব্দতত্ত্ব তাহা উচ্চারণবিধিবশত । যেখানে আন্তক্ষরে অ্যাকার একার বা ওকার অাছে সেখানে আবার আরএক দিকে স্বরব্যত্যয় ঘটে ; নিয়মমত, ঠ্যালাঠ্যালি না হইয়া ঠ্যালাঠেলি, টিপাটেপি না হইয়া টেপাটিপি, এবং কোনাকোনি না হইয়া কোনাকুনি হয়। কিন্তু, শেষাশেষি দ্বেষাদ্ধেবি রেষারেষি মেশামেশি প্রভৃতি শ-ওয়ালা কথায় একারের কোনো বৈলক্ষণ্য ঘটে না । বাংলা উচ্চারণবিধির এই-সকল রহস্ত আলোচনার বিষয় । আমরা শেষোক্ত তালিকাটিকে বাংলার ইঙ্গিত-বাক্যের মধ্যে ভূক্ত করিলাম কেন তাহা বলা আবখ্যক । কানাকানি করিতেছে বা বলাবলি করিতেছে, বলিলে যে-সকল কথা উহ থাকে তাহা কেবল কথার ভঙ্গিতে ব্যক্ত হইতেছে। পরম্পর পরম্পরের কানে কথা বলিতেছে, বলিলে প্রকৃত ব্যাপারটাকে অর্থবিশিষ্ট কথায় ব্যক্ত করা হয়, কিন্তু কান কথাটাকে দুইবার বাকাইয়া বলিয়া একটা ইঙ্গিতে সমস্তটা সংক্ষেপে সারিয়া দেওয়া হইল । এ পর্যন্ত আমরা তিন রকমের ইঙ্গিত-বাক্য পাইলাম। একটা ধ্বনিমূলক যেমন, সো-সে। কন্‌কন ইত্যাদি । আর-একটা পদবিকারমূলক ৰেমন, খোলাখালী গোলগাল চুপচাপ ইত্যাদি। আর-একটা পদৰৈতমূলক যেমন, বলাবলি দলাদলি ইত্যাদি । ধ্বনিমূলক শব্দগুলি দুই রকমের ; একটা ধ্বনিদ্বৈত, আর-একটা ধ্বনিৰৈধ। ধ্বনিদ্বৈত যেমন, কলকল কটকট ইত্যাদি ; ধ্বনিদ্বৈধ যেমন, ফুটফট কুপকাপ ইত্যাদি। ধ্বনিমূলক এই শব্দগুলি আমাদের ইঞ্জিয়বোধ বেদনাবোধ প্রভৃতি অনুভূতি প্রকাশ করে । পদবিকারমূলক শব্দগুলি একটা নির্দিষ্ট অর্থকে কেন্দ্র করিয়া তাহার চারি দিকে অনির্দিষ্ট আভাসটুকু ফিকা করিয়া লেপিয়া দেয়। পদদ্বৈতমূলক শব্দগুলি সাধারণত অন্তোন্ততা প্রকাশ করে । ধ্বনিদ্বৈধ ও পদবিকারমূলক শব্দগুলিতে আমরা এ পর্যন্ত কেবল স্বরবিকারেরই পরিচয় পাইয়াছি ; যেমন, হুসহাল— হুসের সহিত যে বর্ণভেদ ঘটিয়াছে তাহা স্বরবর্ণভেদ ; খোলাখালা প্রভৃতি শব্দ সম্বন্ধেও সেইরূপ । এবারে ব্যঞ্জনবর্ণবিকারের দৃষ্টান্ত লইয়া পড়িব । প্রথমে অর্থহীন শব্দমূলক কথাগুলি দেখা যাক ; যেমন, উলখুন উস্কোথুস্কো