মারাঠি হিন্দি প্রভৃতি অধিকাংশ গৌড়ীয় ভাষায় শব্দকে আড় করিয়া বলিবার একটা প্রথা আছে। যেমন হিন্দিতে 'কুত্তা’ সহজরূপ, ‘কুত্তে’ বিকৃতরূপ। ‘ঘোড়া’ সহজরূপ, ‘ঘোড়ে’ বিকৃতরূপ। মারাঠিতে ঘর ও ঘরা, বাপ ও বাপা, জিভ ও জিভে ইহার দৃষ্টান্ত।
এই বিকৃতরূপকে ইংরেজি পারিভাষিকে oblique form বলা হয়; আমরা তাহাকে তির্যকরূপ নাম দিব।
অন্যান্য গৌড়ীয় ভাষার ন্যায় বাংলা ভাষাতেও তির্যকরূপের দৃষ্টান্ত আছে।
যেমন বাপা, ভায়া (ভাইয়া), চাঁদা, লেজা, ছাগলা, পাগলা, গোরা, কালা, আমা, তোমা, কাগাবগা (কর্ণকবক), বাদল বামনা, কোণা ইত্যাদি।
সম্ভবত প্রাচীন বাংলায় এই তির্যকরূপের প্রচলন অধিক ছিল। তাহা নিয়ে উদধৃত প্রাচীন বাক্য হইতে বুঝা যাইবে।
‘নরা গজা বিশে শয়।’
‘গণ’ শব্দের তির্যকরূপ ‘গণা’ কেবলমাত্র ‘গণাগুষ্ঠি’ শব্দেই টিকিয়া আছে। ‘মুড়া’ শব্দের সহজরূপ ‘মুড়’ ‘মাথা-মোড় খোঁড়া’ ‘ঘাড়-মুড় ভাঙা’ ইত্যাদি শব্দেই বর্তমান। যেখানে আমরা বলি ‘গড়গড়া ঘুমচে’ সেখানে এই ‘গড়া’ শব্দকে ‘গড়’ শব্দের তির্যকরূপ বলিয়া গণ্য করিতে হইবে। ‘গড় হইয়া প্রণাম করা’ ও ‘গড়ানো’ ক্রিয়াপদে ‘গড়’ শব্দের পরিচয় পাই। ‘দেব’ শব্দের তির্যকরূপ ‘দেবা’ ও ‘দেয়া’। মেঘ ডাকা ও ভূতে পাওয়া সম্বন্ধে ‘দেয়া’ শব্দের ব্যবহার আছে। ‘যেমন দেবা তেমনি দেবী’ বাক্যে ‘দেবা’ শব্দের পরিচয় পাওয়া যায়। বাংলায় কাব্যভাষায় ‘সব’ শব্দের তির্যকরূপ ‘সবা’ এখনো ব্যবহৃত হয়। যেমন আমাসবা, তোমাসবা, সবারে, সবাই। কাব্য-ভাষায় ‘জন’ শব্দের তির্যকরূপপ ‘জনা’। সংখ্যাবাচক বিশেষণের সঙ্গে ‘জন’ শব্দের যোগ হইলে চলিত ভাষায় তাহা অনেক স্থলে ‘জনা’ হয়। একজনা, দুইজনা ইত্যাদি। ‘জনাজনা’ শব্দের অর্থ প্রত্যেক জন। আমরা বলিয়া থাকি ‘একো জনা একে রকম’৷
তির্যকরূপে সহজরূপ হইতে অর্থের কিঞ্চিৎ ভিন্নতা ঘটে এরূপ দৃষ্টান্তও আছে। ‘হাত’ শব্দকে নির্জীব পদার্থ সম্বন্ধে ব্যবহার কালে তাহাকে তির্যক