পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা ব্যাকরণে তির্বকৃরূপ * 8 × তির্যকরূপ প্রাপ্ত হয়— প্রথমত 'সব’ হইতে হয় ‘সবা তাহার পরে পুনশ্চ তাহাতে এ যোগ হইয়া হয় ‘সবাএ’ । এই সবাএ’ শব্দকে আমরা সবাই' উচ্চারণ করিয়া থাকি । ‘জন’ শব্দ ‘সব’ শব্দের স্তায় । বাংলায় সাধারণত 'জন' শব্দ বিশেষণরূপেই ব্যবহৃত হয়। একজন লোক, ছুজন মানুষ ইত্যাদি । বৰত মাহুষের পূর্বে সংখ্যা যোগ করিবার সময় আমরা তাহার সঙ্গে 'জন' শৰ যোজনা করিয়া দিই। পাচ মাহূব কখনোই বলি না, পাচজন মানুষ বলি। কিন্তু এই ‘জন’ শব্দকে যদি বিশেষ্য করিতে হয় তবে ইহাকে তির্যকৃরূপ দিয়া থাকি । দুজনে, পাচজনে ইত্যাদি । ‘সবাএ’ শব্দের স্কায় "জনাএ’ শব্দ বাংলায় প্রচলিত আছে— এক্ষণে ইহা জনায়' রূপে লিখিত হয় । বাংলায় ‘অনেক’ শব্দটি বিশেষণ । ইহাও বিশেষ্যরূপ গ্রহণকালে "অনেকে’ হয় । সর্বত্রই এ নিয়ম খাটে । ‘কালোএ ( কালোয় ) যার মন ভুলেছে ‘শাদাএ’ ( শাদায় ) তার কি করবে।’ এখানে কালো ও শাদা বিশেষণপদ তিৰ্ধকরূপ ধরিয়া বিশেষ্য হইয়াছে। ‘অপর’ ‘অঙ্ক’ শব্দ বিশেষণ কিন্তু ‘অপরে’ ‘অন্তে’ বিশেষ্য । ‘দশ’ শব্দ বিশেষণ, ‘দশে’ বিশেষ্য ( দশে ষা বলে ) । নামসংজ্ঞা সম্বন্ধে এ-প্রকার তিৰকৃরূপ ব্যবহার হয় না— কখনো বলি না, যাবে ভাত খাচ্চে । তাহার কারণ পূর্বেই নির্দেশ করা হইয়াছে, বিশেষ নাম কখনো সামান্ত বিশেষ্যপদ হইতে পারে না । বাংলায় একটি প্রবাদবাক্য অাছে “রামে মারলেও মরব রাবণে মারলেও মরব।’ বস্তুত এখানে ‘রাম’ ও ‘রাবণ সামান্ত বিশেষ্যপদ— এখানে উক্ত দুই শব্দের দ্বারা দুই প্রতিপক্ষকে বুঝাইতেছে। কোনো বিশেষ রাম-রাবণকে বুঝাইতেছে না। তির্যকৃরূপের মধ্যে প্রায়ই একটি সমষ্টিবাচকতা থাকে। যথা ‘আত্মীয়ে তাকে ভাত দেয় না। এখানে আত্মীয় সমষ্টিই বুঝাইতেছে। এইরূপ লোকে বলে।’ এখানে ‘লোকে’ অর্থ সর্বসাধারণে। "লোক বলে’ কোনোমতেই হয় না। সমষ্টি যখন বুঝায় তখন বানরে বাগান নষ্ট করিয়াছে’ ইহাই ব্যবহার্য— ‘বানর করিয়াছে’ বলিলে বানর দল বুঝাইবে না। সংখ্যা-সহযোগে বিশেষ্যপদ ঘজিচ সামান্ততা পরিহার করে তথাপি সকর্মক রূপে তাহাজের প্রতিও একার প্রয়োগ হয়, যেমন ‘তিন শেয়ালে যুক্তি করে গর্তে ঢুকল’, এমন-কি “আমরা "তোমরা "তারা’ ইত্যাদি সর্বনাম বিশেষণের