পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা নির্দেশক আমরা বাংলা ভাষার নির্দেশক চিহ্ন ‘টি’ ও ‘টা সম্বন্ধে পূর্বেই আলোচনী করিয়াছি। এই শ্রেণীর সংকেত আরো কয়েকটি আছে । খানি ও খানা বাংলা ভাষায় ‘গোটা’ শব্দের দ্বারা অখণ্ডত বুঝায়। এই কারণে, এই ‘গোটা’ শব্দেরই অপভ্রংশ ‘টা’ চিহ্ন পদার্থের সমগ্রতা সূচনা করে । হরিণটা, টেবিলটা, মাঠটা, শব্দে একটা সমগ্র পদার্থ বুঝাইতেছে। বাংলা ভাষার অপর একটি একত্ব নির্দেশক চিহ্ন থানা, খানি । ‘খণ্ড’ শব্দ হইতে উহার উৎপত্তি। এখনো বাংলায় ‘খান খান’ শব্দের দ্বারা খণ্ড খণ্ড বুঝায়। ইহা হইতে মনে হইতে পারে যে, এক-একটি সমগ্র বস্তুকে বুঝাইতে "টা" চিহ্নের প্রয়োগ এবং এক-একটি খণ্ডকে বুঝাইতে ‘খাম’ চিহ্নের প্রয়োগ হইয়৷ থাকে । গোড়ায় কী ছিল বলিতে পারি না, এখন কিন্তু এরূপ দেখা যায় না। আমরা বলি কাগজখানা, শ্লেটখানা । এই কাগজ ও প্লেট সমগ্র পদার্থ হইলেও আসে যায় না । কিন্তু দেখা যাইতেছে যে-সকল সামগ্ৰী দীর্ঘ প্রস্থ বেধে সম্পূর্ণ, সাধারণত তাহদের সম্বন্ধে 'খানা’ ব্যবহার হয় না। যে জিনিসকে প্রস্থের প্রসারের দিক হইতেই দেখি, লম্বের বা বেধের দিক হইতে নয় প্রধানত তাহারই সম্বন্ধে ‘খানা’ ও ‘খানি'র যোগ । মাঠথানা, ক্ষেতখানা ; কিন্তু পাহাড়খানা নদীখানা নয়। থালখানা, খাতাখানা ; কিন্তু ঘটিখানা বাটিখানা নয়। লুচিখানা, কচুরিখানা ; কিন্তু সন্দেশখানা মেঠাইখানা নয়। শালপাতাখানা, কলাপাতাখান ; কিন্তু আমখানা কাঠালখানা নয় । এই যে নিয়মের উল্লেখ করা গেল ইহা সর্বত্র খাটে না । যে জিনিস পাতলা নহে তাহার সম্বন্ধেও ‘খান’ ব্যবহার হইয়া থাকে। যেমন খাটখানা, চৌকিখানা, ঘরখানা, নৌকাখানা। ইহাও দেখা গিয়াছে, এই ‘খানা’ চিহ্নের ব্যবহার সম্বন্ধে সকলের অভ্যাস সমান নহে