পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলা বহুবচন

পূর্বে বলা হইয়াছে ‘গোটা' শব্দের অর্থ সমগ্র। বাংলায় যেখানে বলে ‘একটা’, উড়িয়া ভাষায় সেখানে বলে গোটা। এবং এই গোটা শব্দের টা অংশই বাংলা বিশেষ বিশেষ্যে ব্যবহৃত হয়।

 পূর্ববঙ্গে ইহার প্রথম অংশটুকু ব্যবহৃত হয়। পশ্চিমবঙ্গে ‘চৌকিটা’, পূর্ববঙ্গে ‘চৌকি গুয়া’।

 ভাষায় অন্যত্র ইহার নজির আছে। একদা ‘কর’ শব্দ সম্বন্ধকারকের চিহ্ন ছিল— যথা, তোমাকর, তাকর। এখন পশ্চিমভারতে ইহার 'ক' অংশ ও পূর্বভারতে 'র' অংশ সম্বন্ধ চিহ্নরূপে ব্যবহৃত হইতেছে। হিন্দি হম্‌কা, বাংলা আমার।

 একবচনে যেমন গোটা, বহুবচনে তেমনি গুলা। (মানুষগোটা), মানুষটা একবচন, মানুষগুলা বহুবচন। উড়িয়া ভাষায় এইরূপ বহুবচনার্থে ‘গুড়িয়ে' শব্দের ব্যবহার আছে।

 এই 'গোটা’রই বহুবচনরূপ গুলা, তাহার প্রমাণ এই যে, ‘ট’ সংযোগে যেমন বিশেষ্য শব্দ তাহার সামান্য অর্থ পরিত্যাগ করিয়া তাহার বিশেষ অর্থ গ্রহণ করে— গুলা ও গুলির দ্বারাও সেইরূপ ঘটে। যেমন, ‘টেবিলগুলা বাঁকা’ —অর্থাৎ বিশেষ কয়েকটি টেবিল বাঁকা, সামান্যত টেবিল বাঁকা নহে। কাক শাদা বলা চলে না, কিন্তু কাকগুলো শাদা বলা চলে, কারণ, বিশেষ কয়েকটা কাক শাদা হওয়া অসম্ভব নহে।

 এই ‘গুলা’ শব্দযোগে বহুবচনরূপ নিষ্পন্ন করাই বাংলার সাধারণ নিয়ম। বিশেষ স্থলে বিকল্পে শব্দের সহিত ‘রা’ ও ‘এরা’ যোগ হয়। যেমন, মানুষেরা, কেরানীরা ইত্যাদি।

 এই ‘র’ ও ‘এরা জীববাচক বিশেষ্যপদ ছাড়া অন্যত্র ব্যবহৃত হয় না।

 হলন্ত শব্দের সঙ্গে ‘এরা’ এবং অন্য স্বরান্ত শব্দের সঙ্গে ‘রা’ যুক্ত হয়। যেমন বালকেরা, বধূরা। বালকগুলি, বধূগুলি ইত্যাদিও হয়।

 কথিতভাষায় এই ‘এরা চিহ্নের ‘এ’ প্রায়ই লুপ্ত হইয়া থাকে— আমরা বলি বালকেরা, ছাত্ররা ইত্যাদি।

 ব্যক্তিবাচক বিশেষ্যপদেরও বহুবচনরূপ হইয়া থাকে। যথা, রামেরা—