পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৮
বাংলা শব্দতত্ত্ব

ভান থাকিলে তবে ন্যাকামি হইতে পারে। আমাদের পুরস্কৃত সংজ্ঞালেখক লিখিয়াছেন, “ন্যাকামি বলিতে সাধারণত জানিয়া শুনিয়া বােকা সাজার ভাব বুঝায়” পরে দ্বিতীয় পদে তাহার ব্যাখ্যা করিয়া বলিয়াছেন, “যেন কিছু জানে না, যেন কিছু বুঝে না এই ভাবের নাম ন্যাকামি।” যেন কিছু জানে না, যেন কিছু বুঝে না বলিতে লােকটা যেন নেহাত হাবা, নিতান্ত খোকা এইরূপ বুঝায়, লােকটা যেন কিছু বুঝেই না, এবং তাহাকে বুঝাইবার উপায়ও নাই।

আহ্লাদে

 ১। স্বার্থের জন্য বিবেচনারহিত।

 ২। যাহারা পরিমাণাধিক আহ্লাদে সর্বদাই মত্ত।

 ৩। যে সকল-তাতেই অন্যায়রূপে আমােদ চায়, অথবা যে হক্ না হক্ দাঁত বের করে।

 ৪। অযথা আনন্দ বা অভিমান প্রকাশক।

 ৫। অন্যকে অসন্তুষ্ট করিয়া যে নিজে হাসে।

 ৬। যে সর্বদা আহ্লাদ করিয়া বেড়ায়।

 ৭। কী সময়ে কী অসময়ে যে আহ্লাদ প্রকাশ করে।

 ৮। যে অভিমানী অল্পে অধৈর্য হয়।

 ৯। যে অনুপযুক্ত সময়েও আবদারী।

 ১০। সাধের গােপাল নীলমণি।

 আমার বােধ হয়, যে-ব্যক্তি নিজেকে জগতের আদুরে ছেলে মনে করে তাহাকে আহ্লাদে বলে; প্রশ্রয়দাত্রী মায়ের কাছে আদুরে ছেলেরা যেরূপ ব্যবহার করে যে-ব্যক্তি সকল জায়গাতেই কতকটা সেইরূপ ব্যবহার করিতে যায়। অর্থাৎ যে-ব্যক্তি সময়-অসময় পাত্রাপাত্র বিচার না করিয়া সর্বত্র আবদার করিতে যায়, সর্বত্রই দাঁত বাহির করে, মনে করে সকলেই তাহার সকল বাড়াবাড়ি মাপ করিবে সে-ই আহ্লাদে। তাহাকে কে চায় না-চায়, তাহাকে কে কী-ভাবে দেখে, সে-বিষয় বিবেচনা না করিয়া সে দুলিতে দুলিতে গায়ে পড়িয়া সকলের গা ঘেঁষিয়া বসে, সকলের আদর কাড়িতে চেষ্টা করে। সংজ্ঞালেখকগণ অনেকেই আহ্লাদে ব্যক্তির এক-একটি লক্ষণমাত্র নির্দেশ