পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নিছনি
১৭১

 অন্যত্র আছে:

বরু হাম জীবন তােহে নিরমঞ্ছব
তবহুঁ না সোঁপব অঙ্গ।

ইহার অর্থ, বরং আমার জীবন তােমার নিকট পরিত্যাগ করিব তথাপি অঙ্গ সমর্পণ করিব না।

 আর-এক হলে দেখা যায়:

কুণ্ডল পিচ্ছে চরণ নিরমঞ্ছল
অব কিয়ে সাধসি মান।

অর্থাৎ তােমার চরণে মাথা লুটাইয়া কানের কুণ্ডল ও চূড়ার ময়ুপুচ্ছ দিয়া তােমার পা মুছাইয়া দিয়াছে, তথাপি তােমার মান গেল না?

 এই নির্মঞ্ছন শব্দই যে নিছনি শব্দের মূল রূপ, তাহাতে আর সন্দেহ নাই।

 অভিধানে নির্মঞ্ছন শব্দের অর্থ দেখা যায় ‘নীরাজনা, আরুতি, সেবা, মােছা’ নীরাজনা অর্থ “আরাত্রিক, দীপমালা, সজলপদ্ম, ধৌতবস্ত্র, বিল্বপত্রাদি, সাষ্টাঙ্গপ্রণাম― এই পঞ্চ দ্বারা আরাধনা, আরুতি।” উহার আর-এক অর্থ ‘শান্তিকর্মবিশেষ।’

 অতএব যেখানে ‘নিছনি লইয়া মরি’ বলা হয় সেখানে বুঝায় তােমার সমস্ত অমঙ্গল লইয়া মরি— এখানে ‘শান্তিকর্ম’ অর্থের প্রয়ােগ।

দোঁহে দোঁহে তনু নিরছাই

এ স্থলে নিরছাই অর্থে মােছা।

নিরমল কুলশীল বিদিত ভুবন,
নিছনি করিনু তােমার ছুঁইয়া চরণ।

এখানে নিছনি অর্থে স্পষ্টই আরাধনার অর্ঘ্যোপহার বুঝাইতেছে।

পরাণ নিছিয়া দিই পিরীতে তােমার

অর্থাৎ, তােমার প্রেমে প্রাণকে উপহারস্বরূপে অর্পণ করি।

তােমার পিরীতে হাম হই বিকিনী
মূলে বিকালাঙ, আর কি দিব নিছনি!

ইহার অর্থ বােধ করি নিম্নলিখিতমত হইবে—

 তােমার প্রেমে যখন আমি সমূলে বিক্রীত হইয়াছি তখন বিশেষ করিয়া আরাধনাযোগ্য উপহার আর কী দিব।