পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নিছনি
১৭৩

আমার বিবেচনায় এখানেও নিছনি অর্থে বালাই বুঝাইতেছে।

সবার অগ্রজ তুমি,  তােরে কি শিখাব আমি
বাপ মাের যাইবে নিছনি।

এখানেও তাহাই।

নিছনি যাইয়ে পুত্র উঠহ এখন
কহয়ে মাধব উঠি বসিল তখন।

নিছনি যাইয়ে― অর্থাৎ সমস্ত অমঙ্গল দূর হইয়া।

১। অমিয়া নিছনি বাজিছে সঘনে মধুর মুরলী গীত
অবিচল কুল রমণী সকল শুনিয়া হরল চিত।

অমিয়া নিছনি― অর্থাৎ অমৃত মুছিয়া লইয়া।

২। নন্দের নন্দন গােকুল কানাই সবাই আপনা বোলে
মােপুনি ইছিয়া নিছিয়া লইনু অনাদি জনম ফলে।

নিছিয়া লইনু― আরাধনা করিয়া লইনু, অর্থাৎ বরণ করিয়া লইনু অর্থ হইতে পারে।

৩। তথা কনক বরণ কিরে দরপণ নিছনি দিয়ে যে তার
কপালে ললিত চান্দ যে শোভিত সিন্দুর অরুণ আর।

৪। তনু ধন জন যৌবন নিছিনু কালার পিরিতে।

 উদ্‌ধৃত [১, ২, ৩, ৪] অংশগুলি চণ্ডিদাসের পদের অন্তর্গত সন্দেহ নাই।

 নিছনি শব্দ যদি নির্মঞ্ছন শব্দেরই অপভাষা হয় তবে নির্মঞ্ছন শব্দের যতগুলি অর্থ আছে নিছনি শব্দের তদতিরিক্ত অর্থ হওয়ার সম্ভাবনা বিরল। দীনেন্দ্রকুমার বাবু নিছনি শব্দের যতগুলি প্রয়ােগ উদ্‌ধৃত করিয়াছেন[১] তাহার সকলগুলিতেই কোনাে-না-কোনাে অর্থে নির্মঞ্ছন শব্দ খাটে।

 দীনেন্দ্রবাবু শ্রম স্বীকার করিয়া এই আলােচনায় যােগ দিয়াছেন সেজন্য আমি বিশেষ আনন্দ লাভ করিয়াছি। আমাদের প্রাচীন কাব্যে যে-সকল দুর্বোধ শব্দপ্রয়ােগ আছে সাধারণের মধ্যে আলােচিত হইয়া এইরূপে তাহার মীমাংসা হইতে পারিলে বড়ই সুখের বিষয় হইবে।

 বৈশাখ ১২৯৯

  1. শ্রীদীনেন্দ্রকুমার রায়, ‘নিছনি’, সাধনা, বৈশাখ ১২৯৯।