এরূপ অর্থ নাই। রাধামোহনেও ভণে অর্থে পহুঁ-র ব্যবহার অত্যন্ত বিরল― দৈবাৎ দুই-একটি যদি পাওয়া যায়।
রাধামােহন পহুঁ তুয়া পায়ে নিবেদয়ে।
এ হলে ‘পহুঁ’ অর্থে পুনঃ এবং অন্যত্র অধিকাংশ স্থলেই পহুঁ অর্থে প্রভু। কিন্তু গোবিন্দদাসের অনেক স্থলে পহুঁ-র ‘ভণে’ অর্থব্যবহার দেখা যায়।
গোবিন্দদাস পহুঁ দীপ সায়াহ্ন, বেলি অবসান ভৈ গেলি।
অর্থাৎ গােবিন্দদাস কহিতেছেন বেলা অবসান হইয়াছে, সন্ধ্যাদীপের সময় হইল। ইহা ছাড়া এ স্থলে আর-কোনােরূপ অর্থ কল্পনা করা যায় না। আরাে এমন অনেক দৃষ্টান্ত দেওয়া যাইতে পারে।
এক্ষণে কথা এই, কোন্ ধাতু অনুসারে পঁহু-র ভণে অর্থ স্থির হইতে পারে। এক, ভণহুঁ[১] হইতে ভহুঁ এবং ক্রমে পহুঁ হওয়া নিতান্ত অসম্ভব নহে—কিন্তু ইহা একটা কাল্পনিক অনুমানমাত্র। বিশেষত, যখন গােবিন্দদাস ব্যতীত অন্য কোনাে প্রাচীন পদকর্তার পদে পহুঁ-র এরূপ অর্থ দেখা যায় না, তখন উক্ত অনুমানের সংগত ভিত্তি নাই বলিতে হইবে।
আমার বিবেচনায় পূর্বোক্তরূপ ভণিতার পহুঁ অর্থে পুনঃ-ই ধরিয়া লইতে হইবে, এবং স্থির করিতে হইবে এরূপ ক্রিয়াহীন অসম্পূর্ণ পদবিন্যাস গোবিন্দদাসের একটি বিশেষত্ব ছিল। ‘গােবিন্দদাস পঁহু,’ অর্থাৎ ‘গোবিন্দদাস পুনশ্চ বলিতেছেন’, এইরূপ অর্থ করিতে হইবে। গােবিন্দদাসের স্থানে স্থানে পহুঁ শব্দের পরে ক্রিয়ার যােগও দেখা যায়। যথা:
গােবিন্দদাস পহুঁ এই রস গায়
অর্থাৎ গােবিন্দদাস পুনশ্চ এই রস গান করেন।
পাঠকেরা আপত্তি করিতে পারেন এরূপ স্থলে পুনঃ অর্থের বিশেষ সার্থকতা দেখা যায় না। কিন্তু প্রাচীন কবিদের পদে একপ্রকার অনিদিষ্ট অর্থে পুনঃ শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। যথা:
তুহারি চরিত নাহি জানি, বিদ্যাপতি পুন শিরে কর হানি।
রাধামােহন পুন তঁহি ভেল বঞ্চিত।
গােবিন্দদাস কহই পুন এতিখনে জানিয়ে কী ভেল গােরি।
- ↑ ভণহুঁ বিদ্যাপতি, শুন বর যুবতী।