পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৬
বাংলা শব্দতত্ত্ব

হাঁড়ি চড়ে না।’ ইহাকে উল্টাইয়া বলা চলে ‘যাহার ঘরে হাঁড়ি চড়ে না এমন গরিবও আছে।’ ‘এমন জলচর জীব আছে যাহারা স্তন্যপায়ী এবং ভাসিয়া উঠিয়া যাহাদিগকে খাস গ্রহণ করিতে হয়’। এই ‘এমন’ শব্দ না থাকিলে বাক্যের শেষভাগে ‘যাহাদিগকে’ শব্দ ব্যবহার করা যায় না। যেমন, ‘তিমি জাতীয় স্তন্যপায়ী জলে বাস করে, ভাসিয়া উঠিয়া যাহাদিগকে শ্বাস গ্রহণ করিতে হয়’— ইহা ইংরেজি রীতি; বাংলা রীতিতে যাহাদিগকে না বলিয়া তাহাদিগকে বলিতে হইবে।

 ইংরেজিতে subject শব্দের অনেকগুলি অর্থ আছে তাহার মধ্যে একটি অর্থ, আলোচ্য প্রসঙ্গ। ইহাকেই আমরা বিষয় বলি। Subject of conversation, subject of discussion ইত্যাদির বাংলা— আলাপের বিষয়, তর্কের বিষয়। কিন্তু subject to cold ‘সর্দির বিষয়’ নহে। এরূপ স্থলে সংস্কৃত ভাষায় আস্পদ, পাত্র, ভাজন, অধীন, বশীভূত প্রভৃতির প্রয়োগ চলে। রোগাস্পদ, আক্রমণের পাত্র, মৃত্যুর বশীভূত ইত্যাদি প্রয়োগ চলিতে পারে।

 আমাদের অনেক পত্রলেখকই subject কথাটাকে এড়াইয়া চলিয়াছেন। তাঁহারা লিখিয়াছেন কীটশত্রু ‘গাছগুলিকে আক্রমণ করে’। ইহাতে আক্রমণ ব্যাপারকে নিত্য ঘটনা বলিয়া স্বীকার করা হয়। কিন্তু subject to attack বলিলে বুঝায় এখনো আক্রমণ না হইলেও গাছগুলি আক্রমণের লক্ষ্য বটে।

 ইংরেজি বাক্যটিকে আমি এইরূপ তরজমা করিয়াছি: ‘আমাদের বনের এবং ফলবাগানের গাছগুলি আপন বৃদ্ধিকালের প্রত্যেক পর্বে দলে দলে শত্রুকীটের আক্রমণভাজন হইয়া থাকে; ইহারা বাধা না পাইলে শীঘ্রই গাছগুলিকে সম্পূর্ণ নষ্ট করিত।’

 ‘What the loss our forest and shade trees would mean to us can better be imagined than described.’ পত্রলেখকের তরজমা: ‘বন্য ও ছায়াপাদপের ক্ষতি বলিতে কতটা ক্ষতি আমাদের বোধগম্য হয় তাহা বর্ণনা করা অপেক্ষা আমাদের অধিক উপলব্ধির বিষয়।’

 ‘বর্ণনা করা অপেক্ষা অধিক উপলব্ধির বিষয়’ এরূপ প্রয়োগ চলে না। একটা কিছু করার সঙ্গে আর-একটা কিছু করার তুলনা চাই। ‘বর্ণনা করা অপেক্ষা উপলব্ধি করা সহজ’ বলিলে ভাষায় বাধিত না বটে কিন্তু উপলব্ধি করা এবং imagine করা এক নহে।