পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭২
বাংলা শব্দতত্ত্ব

একই’। বলি, ‘মোট কথা এই’, কিন্তু বলি নে ‘এই কথাটাই মোট’। যাই হোক, দুই অক্ষরের হসন্ত বাংলা বিশেষণ হয়তো ভেবে ভেবে আরো মনে আনা যেতে পারে, কিন্তু যথেষ্টই ভাবতে হয়।

 অপর পক্ষে বেশি খুঁজতে হয় না যথা, বড়ো, ছোটো, মেঝো, সেজো, ভালো, কালো, ধলো, রাঙা, সাদা, ফিকে, খাটো, রোগা, মোটা, বেঁটে, কুঁজো, ত্যাড়া, বাঁকা, সিধে, কানা, খোঁড়া, বোঁচা, নুলো, ন্যাকা, হাঁদা, খাঁদা, টেরা, কটা, গ্যাঁটা, গোটা, ভোঁদা, ন্যাড়া, ক্ষ্যাপা, মিঠে, ডাঁসা, কষা, খাসা, তোফা, কাঁচা, পাকা, সোঁদা, বোদা, খাঁটি, মেকি, কড়া, মিঠে, চোখা, রোখা, আঁটা, ফাটা, পোড়া, ভিজে, হাজা, শুকো, গুঁড়ো, বুড়ো, ছোঁড়া, গোঁড়া, ওঁচা, খেলো, ছ্যাঁদা, ঝুঁটো, ভীতু, আগা, গোড়া, উঁচু, নিচু ইত্যাদি। মত শব্দটা বিশেষ্য, ওইটে থেকে বিশেষণ জন্ম নিতেই সে হল মতো।

 কেন আমি বাংলা দুই অক্ষরের বিশেষণ পদ থেকে তার অন্তস্বর লোপ করতে পারব না তার কৈফিয়ত আমার এইখানেই রইল।

 বাংলা শব্দে কতকগুলি মুদ্রাভঙ্গি আছে। ভঙ্গিংকেত যেমন অঙ্গের সঙ্গে অবিচ্ছেদে যুক্ত এগুলিও তেমনি। যে মানুষ রেগেছে তার হাত থেকে ছুরিটা নেওয়া চলে, কিন্তু ভ্রূর থেকে ভ্রূকুটি নেওয়া যায় না। যেমনি, তখনি, আমারো, কারো, কোনো, কখনো শব্দে ইকার এবং ওকার কেবলমাত্র ঝোঁক দেবার জন্যে, ওরা শব্দের অনুবর্তী না হয়ে, যথাসম্ভব তার অঙ্গীভূত থাকাই ভালো। যথাসম্ভব বলতে হল এইজন্যে যে স্বরান্ত শব্দে সংকেত স্বরগুলি অগত্যা সঙ্গে থাকে, মিলে থাকে না, যেমন তোমরাও, আমরাই। কিন্তু যেখানে উচ্চারণের মধ্যে মিলনের বাধা নেই, সেখানে আমি ওদের মিলিয়ে রাখব। কেন আমি বিশেষ ভাবে মিলনের পক্ষপাতী একটা ছড়া দিয়ে বুঝিয়ে দেব।

যেমনি যখনি দেখা দিই তার ঘরে
অমনি তখনি মিথ্যা কলহ করে।
কোনো কোনো দিন কহে সে নোলক নাড়ি
কারো কারো সাথে জন্মের মতো আড়ি।

যদি বানান করি যেমনই, যখনই, অমনই, তখনই, কোনও, কারও, দৃষ্টিকটুত্বের নালিশ হয়তো গ্রাহ্য না হতে পারে। কিন্তু ‘যখনই’ বানানের স্বাভাবিক যে উচ্চারণ, ছন্দের অনুরোধে সেটা রক্ষা করতে চায় এমন কবি হয়তো জন্মাতেও