পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯২
বাংলা শব্দতত্ত্ব

পীড়িত করলে। তােমার প্রুফে তুমি ক্ষুদে ক্ষুদে চিহ্নের ঝাঁকে আমার কাব্যকে এমনি আচ্ছন্ন করেছ যে তাদের জন্য মশারি ফেলতে ইচ্ছে হয়। আমার প্রুফে আমি এর একটাও ব্যবহার করি নি― কেননা, জানি বুঝতে কানাকড়ি পরিমাণেও বাধে না। জানি আমার বইয়ে নানা বানানে চিহ্নপ্রয়ােগের নানা বৈচিত্র্য ঘটেছে ―তা নিয়েও আমি মাখা বকাই নে― যেখানে দেখি অর্থবোধে বিপত্তি ঘটে সেখানে ছাড়া এইদিকে আমি দৃক্‌পাতও করি নে। প্রুফে যত অনাবশ্যক সংশােধন বাড়াবে ভুলের সম্ভাবনা ততই বাড়বে― সময় নষ্ট হবে, তার বদলে লাভ কিছুই হবে না। ততো যতাে শব্দে ওকার নিতান্ত অসংগত। মতো সম্বন্ধে অন্য ব্যবস্থা। মােটের উপর আমার বক্তব্য এই― পাঠককে গােড়াতেই পাগল নির্বোধ কিংবা আহেলা-বেলাতি বলে ধরে নিয়ো না― যেখানে তাদের ভুল করবার কোনাে সম্ভাবনা নেই সেখানে কেবলি তাদের চোখে আঙুল দিয়ো না― চাণক্যের মত চিহ্নের কুশাঙ্কুরগুলাে উৎপাটিত কোরাে তা হলে বানানভীরু শিশুদের যিনি বিধাতা তাঁর আশীর্বাদ লাভ করবে।

 আমি যে নির্বিচারে চিহ্নসূয়যজ্ঞের জনমেজয়গিরি করতে বসেছি তা মনে কোরাে না। কোনাে কোনাে স্থলে হাইফেন চিহ্নটার প্রয়ােজন স্বীকার করি। অব্যয় ‘যে’ এবং সর্বনাম ‘যে’ শব্দের প্রয়ােগভেদ বােঝাবার জন্যে আমি হাইফেনের শরণাপন্ন হই। ‘তুমি যে কাজে লেগেছ’ বলতে বােঝায় তুমি অকর্মণ্য নও, এখানে ‘যে’ অব্যয়। ‘তুমি যে কাজে লেগেছ’ এখানে কাজকে নির্দিষ্ট করবার জন্য ‘যে’ সর্বনাম বিশেষণ। প্রথম ‘যে’ শব্দে হাইফেন দিয়ে ‘তুমি’-র সঙ্গে ও দ্বিতীয় ‘যে’-কে ‘কাজ’ শব্দের সঙ্গে যুক্ত করলে অর্থ স্পষ্ট হয়। অন্যত্র দেখাে— ‘তিনি বললেন যে আপিসে যাও, সেখানে ডাক পড়েছে’। এখানে ‘যে’ অব্যয়। অথবা তিনি বললেন ‘যে আপিসে যাও সেখানে ডাক পড়েছে।’ এখানে ‘যে’ সর্বনাম, আপিসের বিশেষণ। হাইফেন চিহ্নে অর্থভেদ স্পষ্ট করা যায়। যথা, ‘তিনি বললেন-যে আপিসে যাও, সেখানে ডাক পড়েছে।’ এবং ‘তিনি বললেন যে-আপিসে যাও সেখানে ডাক পড়েছে।’[১]

 ১৯৩১

  1. জীবনময় রায়কে লিখিত পত্রের পরিমার্জিত রূপ।