পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাংলা উচ্চারণ

ইংরেজি শিখিতে আরম্ভ করিয়া ইংরেজি শব্দের উচ্চারণ মুখস্থ করিতে গিয়াই বাঙালি ছেলের প্রাণ বাহির হইয়া যায়। প্রথমত ইংরেজি অক্ষরের নাম একরকম, তাহার কাজ আর-এক রকম। অক্ষর দুটি যখন আলাদা হইয়া থাকে তখন তাহারা এ বি, কিন্তু একত্র হইলেই তাহারা অ্যাব্ হইয়া যাইবে, ইহা কিছুতেই নিবারণ করা যায় না। এদিকে u-কে মুখে বলিব ইউ, কিন্তু up-এর মুখে যখন থাকেন তখন তিনি কোনো পুরুষে ইউ নন। ও পিসি এদিকে এসো, এই শব্দগুলো ইংরেজিতে লিখিতে হইলে উচিতমত লেখা উচিত— O pc adk to। পিসি যদি বলেন এসেছি, তবে লেখো She; আর পিসি যদি বলেন এইচি, তবে আরো সংক্ষেপ— he। কিন্তু কোনো ইংরেজের পিসির সাধ্য নাই এরূপ বানান বুঝিয়া উঠে। আমাদের কখগঘ-র কোনো বালাই নাই; তাহাদের কথায় নড়চড় হয় না।

  এই তো গেল প্রথম নম্বর। তার পরে আবার এক অক্ষয়ের পাঁচ রকম উচ্চারণ। অনেক কষ্টে যখন বি এ=বে, সি এ=কে মুখস্থ হইয়াছে, তখন শুনা গেল, বি এ বি=ব্যাব্, সি এ বি=ক্যাব্। তাও যখন মুখস্থ হইল তখন শুনি বি এ আর=বার্, সি এ আর=কার্। তাও যদি বা আয়ত্ত হইল তখন শুনি, বি এ ডব্‌ল্-এল্=বল্, সি এ ডব্‌ল্-এল্=কল্। এই অকূল বানানপাথারের মধ্যে গুরুমহাশয় যে আমাদের কর্ণ ধরিয়া চালনা করেন, তাঁঁহার কম্পাসই বা কোথায়, তাঁঁহার ধ্রুবতারাই বা কোথায়।

  আবার এক-এক জায়গায় অক্ষর আছে অথচ তাহার উচ্চারণ নাই; একটা কেন, এমন পাঁচটা অক্ষর সারি সারি বেকার দাড়াইয়া আছে, বাঙালির ছেলের মাথায় পীড়া ও অম্লরোগ জন্মাইয়া দেওয়া ছাড়া তাহাদের আর-কোনো সাধু উদ্দেশ্যই দেখা যায় না। মাস্টারমশায় psalm শব্দের বানান জিজ্ঞাসা করিলে কিরূপ হৃৎকম্প উপস্থিত হইত, তাহা আজও কি ভুলিতে পারিয়াছি। পেয়ারার মধ্যে যেমন অনেকগুলো বীজ কেবলমাত্র খাদকের পেটকামড়ানির প্রতি লক্ষ্য করিয়া বিরাজ করে, তেমনি ইংরেজি শব্দের উদর পরিপূর্ণ করিয়া অনেকগুলি অক্ষর কেবল রোগের বীজস্বরূপে থাকে মাত্র। বাংলায় এ উপদ্রব নাই। কেবল একটিমাত্র শব্দের মধ্যে একটা দুষ্ট অক্ষর নিঃশব্দ পদসঞ্চারে