পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাচীন-কাব্য সংগ্রহ
৩৩৩

যব গােধূলি সময় বেলি,
ধনি মন্দির বাহির ভেলি,
নব জলধরে বিজুরি-রেখা দ্বন্দ পসারিয়া গেলি।

সং ১৬, পৃ. ১৭

 সম্পাদক টীকা করিতেছেন: ‘বিদ্যুৎ রেখার সহিত দ্বন্দ্ব (বিবাদ) বিস্তার করিয়া গেল। অর্থাৎ তাহার সমান বা অধিক লাবণ্যময়ী হইল।’ ‘সহিত’ শব্দটি সম্পাদক কোথা হইতে সংগ্রহ করিলেন? ইহার সহজ অর্থ এই—‘রাধা গােধূলির ঈষৎ অন্ধকারে মন্দিরের বাহির হইলেন; যেন নব জলধরে বিদ্যুৎ রেখা দ্বন্দ্ব বিস্তার করিয়া গেল।’ ইহাই ব্যাকরণশুদ্ধ ও সুভাব-সংগত অর্থ।

 সম্পাদক ২০-সংখ্যক গীতের কোনাে অর্থ দেন নাই। আমাদের মতে তাহার ব্যাখ্যা আবশ্যক। সে গীতটি এই—

এ সখি কি পেখনু এক অপরূপ।
শুনইতে মানবি স্বপন স্বরূপ।
কমল যুগলপর চাঁদকি মাল।
তাপর উপজল তরুণ তমাল।
তাপর বেড়ল বিজুরী লতা।
কালিন্দী তীর ধীর চলি যাতা।
শাখাশিখর সুধাকর পাঁতি।
তাহে নব পল্লব অরুণক ভাতি।
বিমল বিম্বফল যুগল বিকাশ।
তাপর কির থির করু বাস।
তাপর চঞ্চল খঞ্জন যােড়।
তাপর সাপিনী ঝাঁপল মােড়। পৃ. ২১

 ইহাতে কৃষ্ণের শরীরের বর্ণনা হইতেছে। ‘নখ চন্দ্রমালা শােভিত-পদকমলদ্বয়ের উপরে তরুণ তমালবৎ কৃষ্ণের শরীর উঠিয়াছে। পীতাম্বর বিদ্যুতে তাঁহাকে বেড়িয়াছে।[১] সে তমাল তরুর শাখাশিখর, অর্থাৎ মুখ, সুধাকর। লাবণ্যই বােধ

  1. অভিনব জলধর সুন্দর দেহ।
    পীতবসন পরা সৌদামিনী সেহ। সং ১৮, পৃ. ২০