পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫২
বাংলা শব্দতত্ত্ব

মানস রহিল। আমি সাহিত্যের সেবক। সাহিত্য লইয়াই অক্ষয়বাবুর সহিত বিবাদ করিয়াছি, তাহা আমার কর্তব্য কর্ম। সাহিত্য-বহির্ভূত ব্যক্তিগত কোনো কথার উল্লেখ করিয়া তাঁহার প্রতি আমার আক্রোশ প্রকাশ করি নাই; এমন স্থলে যদি কেহ বলেন যে, ‘লেখক কোনো কারণ প্রযুক্ত ইতিপূর্বে সম্পাদকের উপর চটিয়াছিলেন, এক্ষণে সুযোগ পাইয়া এই প্রস্তাবে গাত্রের জ্বালা নিবারণ করিয়াছেন’ তবে তাঁহার শিক্ষার অসম্পূর্ণতা ও রুচির বিকার প্রকাশ পায়। যাহাই করুন, অক্ষয়বাবুর উপর আমার এতখানি বিশ্বাস আছে, যাহাতে অসংকোচে বলিতে পারি যে, তিনি এরূপ মনে করিবেন না। তিনি যে আদৌ এমন কষ্টসাধ্য ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করিয়াছেন, এবং এই কার্যসাধনে (আমার মনের মতো না হউক তবুও) অনেকটা পরিশ্রম করিয়াছেন, তজ্জন্য তাঁহার নিকট কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিতেছি, ও পূর্ব প্রবন্ধে যদি যথেষ্ট না করিয়া থাকি তবে মার্জনা চাহিতেছি।

 ভাদ্র ১২৮৮

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পরিশিষ্ট

উপস্থিত-সংখ্যক ভারতীতে বিদ্যাপতি সম্বন্ধে আমার একটি মাত্র বক্তব্য আছে। প্রাচীন-কাব্য-সংগ্রহ সমালোচনায় আমি ‘এ সখি, কি পেখনু এক অপরূপ’ ইত্যাদি পদটির অর্থ প্রকাশ করিয়াছিলাম। কিন্তু তাহার এক স্থানে অর্থ বুঝিতে গোলযোগ ঘটায় সন্দিগ্ধভাবে একটা অনুমান-করিয়া-লওয়া ব্যাখ্যা দেওয়া হইয়াছিল। আর-একবার মনোযোগপূর্বক ভাবিয়া ইহার যে অর্থ পাইয়াছি, তাহাতে আর সন্দেহ করিবার কিছু নাই। কেহ কেহ বলেন এই পদটির আদিরস-ঘটিত গূঢ় অর্থ আছে; কিন্তু তাহা কোন মতেই বিশ্বাস করা যায় না। সহজে ইহার যে অর্থ পাওয়া যায় তাহা অগ্রাহ্য করিয়া ইহার মধ্য হইতে একটা অশ্লীল আদিরস-ঘটিত অর্থ বাহির করা নিতান্ত কষ্টকল্পনা ও অরসিক-কল্পনার কাজ। শ্রীকৃষ্ণের শরীরের বর্ণনাই ইহার মর্ম। প্রথমে পদটি উদ্‌ধৃত করি।

এ সখি কি পেখনু এক অপরূপ।
শুনাইতে মানবি স্বপন স্বরূপ।