পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাচীন-কাব্য সংগ্রহ
৩৫৩

কমল-যুগল পর চাঁদকি মাল।
তা’পর উপজল তরুণ তমাল।
তা’পর বেড়ল বিজুরী লতা।
কালিন্দী তীর ধীর চলি যাতা।
শাখাশিখর সুধাকর পাঁতি।
তাহে নব-পল্লব অরুণক ভাতি।
বিমল বিম্ব ফল যুগল বিকাশ।
তা’পর কির থির কর বাস।
তা’পর চঞ্চল খঞ্জন যোড়।
তা’পর সাপিনী ঝাঁপল মোড়।

 সকলেই জানেন, দেবতাদের শরীর বর্ণনায় পা হইতে প্রথমে আরম্ভ করিয়া উপরে উঠিতে হয়। এই পদ্ধতি অনুসারে কবি প্রথমে নখ-চন্দ্র-মালা শোভিত চরণ-কমল-যুগলের বর্ণনা করিয়াছেন, তাহার উপরে তরুণ তমাল স্বরূপ কৃষ্ণের পদদ্বয় উঠিয়াছে। তাহার পর বিজুরী লতা অর্থাৎ পীত বসন সে পদদ্বয় বেষ্টন করিয়াছে; (বিদ্যুতের সহিত পীত বসনের উপমা অন্যত্র আছে, যথা— ‘অভিনব জলধর সুন্দর দেহ। পীত বসন পরা সৌদামিনী সেহ।’)। পদদ্বয়ের বর্ণনা সমাপ্ত হইলে পর পদদ্বয়ের কার্যের উল্লেখ হইল— ‘কালিন্দী তীর ধীর চলি যাতা।’ তাহার পরে বাহুই শাখায় ও তাহার অগ্রভাগে নখরের সুধাকর-পঙ্‌ক্তি ও তাহাতে অরুণভাতি করপল্লব। এইবারে বর্ণনা মুখমণ্ডলে আসিয়া পৌঁছিল। প্রথমে বিম্বফল ওষ্ঠাধর যুগল তাহাতে কিরণ অর্থাৎ হাস্য স্থির রূপে বাস করে। তাহার উর্ধ্বে চঞ্চল-খঞ্জন চক্ষু। ও সকলের উর্ধ্বে সাপিনীর বেষ্টনের ন্যায় শ্রীকৃষ্ণের চুড়া।

 এখন আমি অসংকোচে ও নিঃসন্দিগ্ধ চিত্তে বলিতে পারি যে, উপরি-উক্ত অর্থই, ঐ পদটির যথার্থ অর্থ। ইহা ব্যতীত অন্য কোনো গূঢ় অর্থ বুঝানো কবির অভিপ্রায় ছিল না।[১]

 কার্তিক ১২৮৮

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
  1. অপিচ দ্রষ্টব্য “জিজ্ঞাসা ও উত্তর”, ভারতী, জৈষ্ঠ্য-শ্রাবণ, ১২৯০।