পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বাংলা উচ্চারণ
২৫

  আমি স্থির করিলাম— সংস্কৃত মূলশব্দের ইকারের অপভ্রংশ বাংলার যেখানে ‘এ’ হয় সেখানে বিশুদ্ধ ‘এ’ উচ্চারণ থাকে। খেলন হইতে খেলা, কিন্তু গিলন হইতে গেলা— এই শেষোক্ত এ অবিকৃত আছে। ইহার পোষক আরো অনেকগুলি প্রমাণ পাওয়া গেল; যেমন, মিলন হইতে মেলা (মিলিত হওয়া), মিশ্রণ হইতে মেশা, চিহ্ন হইতে চেনা ইত্যাদি।

  ইহার প্রথম ব্যতিক্রম দেখিলাম, বিক্রয় হইতে বেচা (ব্যাচা), সিঞ্চন হইতে সেঁচা (স্যাঁঁচা), চীৎকার হইতে চেঁঁচানো (চ্যাঁঁচানো)।

  তখন আমার পূর্বসন্দেহ দৃঢ় হইল যে, চ অক্ষরের পূর্বে একার উচ্চারণের বিকার ঘটে। এইজন্যই চ-এর পূর্বে আমার এই শেষ নিয়মটি খাটিল না।

  যাহা হউক, যদি এই শ্রেণীর শব্দ সম্বন্ধে একটা সর্বব্যাপী নিয়ম করিতে হয় তবে এরূপ বলা যাইতে পারে— যে-সকল অসমাপিকা ক্রিয়ার আদ্যক্ষরে ই সংযুক্ত থাকে, বিশেষ্যরূপ ধারণকালে তাহাদের সেই ইকার একারে বিকৃত হইবে এবং অসমাপিকা-রূপে যে-সকল ক্রিয়ার আদ্যক্ষরে ‘এ’ সংযুক্ত থাকে, বিশেষ্যরূপে তাহাদের সেই একার অ্যাকারে পরিণত হইবে। যথা:

অসমাপিকা ক্রিয়ারূপে বিশেষ্যরূপে
কিনিয়া কেনা
বেচিয়া ব্যাচা
মিলিয়া মেলা
ঠেলিয়া ঠ্যালা
লিখিয়া লেখা
দেখিয়া দ্যাখা
হেলিয়া হ্যালা
গিলিয়া গেলা

  এ নিয়মের কোথাও ব্যতিক্রম পাওয়া যাইবে না।

  মোটের উপর ইহা বলা যায় যে, এ হইতে একেবারে আ উচ্চারণে যাওয়া রসনার পক্ষে কিঞ্চিৎ আয়াসসাধ্য, আ হইতে এ উচ্চারণে গড়াইয়া পড়া সহজ। এইজন্য আমাদের অঞ্চলে আকারের পূর্ববর্তী একার প্রায়ই অ্যা নামক সন্ধিস্বরকে আপন আসন ছাড়িয়া দিয়া রসনার শ্রমলাঘব করে।

 কার্তিক ১২৯৯