পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
টা টো টে
২৭

  আ এবং ই মিলিত হইয়া যুক্তস্বর ‘ঐ’ হয়। এজন্য ‘ঐ’ স্বরের পরেও আ স্বরবর্ণ এ হইয়া যায়; যেমন:

কৈলাস—কৈলেস
তৈয়ার—তোয়ের

  কেবল ইহাই নহে। যফলার সহিত সংযুক্ত আকারও একারে পরিণত হয়। কারণ, যফলা ই এবং অ-এর যুক্তস্বর; যথা:

অভ্যাস—অভ্যেস
কন্যা—কন্যে
বন্যা—বন্যে
হত্যা—হত্যে

  আমরা অ স্বরবর্ণের সমালোচনাস্থলে লিখিয়াছিলাম ক্ষ-র পূর্ববর্তী অকার ও হইয়া যায়; যেমন, লক্ষ (লোক্ষ) পক্ষ (পোক্ষ) ইত্যাদি। যে কারণবশত ক্ষ-র পূর্ববর্তী অ ওকারে পরিণত হয়, সেই কারণেই ক্ষ-সংযুক্ত আকার এ হইয়া যায়; যথা, রক্ষা—রক্ষে। বাংলায় ক্ষা-অন্ত শব্দের উদাহরণ অধিক না থাকাতে এই একটি দৃষ্টান্ত দিয়াই নিরন্ত হইলাম।

  যফলা এবং ক্ষ সম্বন্ধে একটি কথা বলিয়া রাখি। যফলা ও ক্ষ-সংযুক্ত আকার একারে পরিণত হয় বটে কিন্তু আদ্যক্ষরে এ নিয়ম খাটে না; যেমন, ত্যাগ ন্যায় ক্ষার ক্ষালন ইত্যাদি।

  বাংলার অনেকগুলি আকারান্ত ক্রিয়াপদ কালক্রমে একারান্ত হইয়া আসিয়াছে। পূর্বে ছিল, করিলা খাইলা করিতা খাইতা করিবা খাইবা; এখন হইয়াছে, করিলে খাইলে করিতে খাইতে করিবে খাইবে। পূর্ববর্তী ইকারের প্রভাবেই যে আ স্বরবর্ণের ক্রমশ এইরূপ দুর্গতি হইয়াছে, তাহা বলা বাহুল্য।

  পূর্বে ই থাকিলে যেমন পরবর্তী আ ‘এ’ হইয়া যায় তেমনই পূর্বে উ থাকিলে পরবর্তী আ ‘ও’ হইয়া যায়, এইরূপ উদাহরণ বিস্তর আছে; যথা:

ফুটা—ফুটো
মুঠা—মুঠো
কুলা—কুলো
চুলা—চুলাে