পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

বাংলা বহুবচন

  সংস্কৃত ভাষার সাত বিভক্তি প্রাকৃতে অনেকটা ক্ষিপ্ত হইয়া আসিয়াছে। প্রাকৃতে চতুর্থ বিভক্তি নাই বলিলেই হয় এবং যষ্ঠীর দ্বারাই প্রথমা ব্যতীত অন্য সকল বিভক্তির কার্য সারিয়া লওয়া যাইতে পারে।

  আধুনিক ভারতবর্ষীয় আর্যভাষাগুলিতে প্রাকৃতের এই নিয়মের প্রভাব দেখা যায়।[১]

  সংস্কৃত ষষ্ঠীর স্য বিভক্তির স্থানে প্রাকৃতে শ্ শ হ হো হে হি বিভক্তি পাওয়া যায়। আধুনিক ভাষাগুলিতে এই বিভক্তির অনুসরণ করা যাক।

চহবানহ পাস —চাঁদ : চহবানের নিকট।
সংসারহি পারা —কবীর : সংসারের পার।
মুনিহিঁঁ দিখাঈ —তুলসীদাস: মুনিকে দেখাইলেন।
যুবরাজপদ রামহি দেহ —তুলসীদাস : যুবরাজপদ রামকে দেও।
কহৌ সম খান্‌ততারহ —চাঁঁদ : তিনি খান্‌ততারহ কহিলেন।
তত্তারহ উপরহ —চাঁঁদ : তাতারের উপরে।
আদিহিতে সব কথা সুনাঈ —তুলসীদাস : আদি হইতে তিনি সকল কথা শুনাইলেন।

  উক্ত উদাহরণ হইতে দেখা যাইতেছে ষষ্ঠী বিভক্তির চিহ্ন প্রায় সকল বিভক্তির কাজ সারিতেছে।

  বাংলায় কী হয় দেখা যাক। বাংলায় যে-সকল বিভক্তিতে ‘এ’ যোগ হয় তাহার ইতিহাস প্রাকৃত হি-র মধ্যে পাওয়া যায়। সংস্কৃত— গৃহস্য, অপভ্রংশ প্রাকৃত— ঘরহে, বাংল— ঘরে। সংস্কৃত— তাম্রকস্য, অপভ্রংশ প্রাকৃত— তম্বঅহে, বাংলায়— তাঁঁবায় (তাঁঁবাএ)।

  পরবর্তী হি যে অপভ্রংশে একার হইয়া যায় বাংলায় তাহার অন্য প্রমাণ আছে। বারবার শব্দটিকে জোর দিবার সময় আমরা ‘বারে বারে’ বলি; সংস্কৃত নিশ্চয়ার্থকসূচক হি-যোগে ইহা নিষ্পন্ন; বারহি বারহ— বারই বারই— বারে বারে।

  1. প্রাকৃতের পরবর্তী সমুদয় সংস্কৃতমূলক ভারতীয় ভাষার উল্লেখস্থলে হ্যর্ন্‌লে ‘গৌড়ীয় ভাষা’ নাম ব্যবহার করিয়াছেন; আমরাও তাঁঁহার অনুসরণ করিব।