ভীমহকরি সেন—ভীমের সৈন্য, তুলসীদাসের: জীবহ্বকের কলেসা—জীবগণের ক্লেশ, তুলনা করিলে উভয়ের সাদৃশ্য সম্বন্ধে সন্দেহ থাকিবে না।
এই কেরক শব্দের সংস্কৃত—কৃতক, কৃত। তস্যকৃত শব্দের অর্থ তাঁঁহার দ্বারা কৃত। এই কৃতবাচক সম্বন্ধ ক্রমে সর্বপ্রকার সম্বন্ধেই ব্যবহৃত হইয়াছে, তাহা পূর্বোক্ত উদাহরণেই প্রমাণ হইবে।
এইস্থলে বাংলা ষষ্ঠীর বহুবচন দের দিগের শব্দের উৎপত্তি আলোচনা করা যাইতে পারে। দীনেশবাবু যে মত প্রকাশ করিয়াছেন তাহা বিশেষ শ্রদ্ধার সহিত আলোচ্য। এ স্থলে উদ্ধৃত করি:
বহুবচন বুঝাইতে পূর্বে শব্দের সঙ্গে খুব সকল প্রভৃতি সংযুক্ত হইত; যথা,
তুমি সব জন্ম জন্ম বান্ধব আমার।
কষ্ণের কৃপায় শাস্ত্র স্ফুরুক সবার।-চৈ ভা
ক্রমে আদি সংযোগে বহুবচনের পদ সৃষ্টি হইতে লাগিল; যথা নরোত্তম বিলাসে,
শ্রীচৈতন্যদাস আদি যথা উত্তরিলা।
শ্রীনৃসিংহ কবিরাজে তথা নিয়ােজিলা॥
শ্রীপতি শ্রীনিধি পণ্ডিতাদি বাসাঘরে।
করিলেন নিযুক্ত প্রবাস আচার্যেরে॥
আকাই হাটের কৃষ্ণদাসাদি বাসায়।
হইলা নিযুক্ত বল্লভীকান্ত তায়॥
এইরূপে, রামাদি জীবাদি হইতে ষষ্ঠী র সংঘোগে— রামদের জীবদের হইয়াছে স্পষ্টই দেখা যায়।
আদি শব্দের উত্তরে স্বার্থে ক যুক্ত হইয়া বৃক্ষাদিক জীবাদিক শব্দের সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। ফলত উদাহরণেও তাহাই পাওয়া যায়; যথা নরোত্তমবিলাসে,
রামচাদিক যৈছে গেলা বৃন্দাবনে।
কবিতার খ্যাতি তার হইল যেমনে।
এই ক-এর গ-এ পরিণতিও সহজেই প্রতিপন্ন হইতে পারে। সুতরাং বৃক্ষাদিগ (বৃক্ষদিগ), জীবাদিগ (জীবদিগ) শব্দ পাওয়া যাইতেছে। এখন ষষ্ঠীর র সংযোগে দিগের এবং কর্মের ও সম্প্রদানের চিহ্নে পরিণত কে-র সংযোগে দিগকে পদ উৎপন্ন হইয়াছে নিঃসংশয়ে বলা যাইতে পারে।