প্রাকৃতের প্রথা অসারে প্রথমে গৌড়ীয় ভাষায় বিভক্তির মধ্যে যষ্ঠী বিভক্তিচিহ্নই একমাত্র অবশিষ্ট ছিল; অবশেষে পরিস্ফুটনের জন্য সেই ষষ্ঠী বিভক্তির সহিত সংলগ্ন করিয়া ভিন্ন ভিন্ন কারকজ্ঞাপক শব্দযোজনা প্রবর্তিত হইল।
বাংলায় এই নিয়মের লক্ষ একেবারে নাই তাহা নহে। ‘হাতর’ না বলিয়া বাংলায় হাতের বলে, ‘ভাইর’ না বলিয়া ভাইয়ের বলে, ‘মুখতে’ না বলিয়া মুখেতে এবং বিকল্পে পাতে এবং পায়েতে বলা হইয়া থাকে।
প্রথমে, হাতে ভাইয়ে মুখে পায়ে রূপ করিয়া তাহাতে র তে প্রভৃতি বিশেষ বিভক্তি যোগ হইয়াছে। পূর্বেই বলা হইয়াছে এই একার প্রাকৃত একবচন ষষ্ঠীবাচক হি হে-র অপভ্রংশ।
আমাদের বিশ্বাস বহুবচনেও বাংলা এক সময়ে হিন্দি অনুযায়ী ছিল এবং সংস্কৃত ষষ্ঠী বহুবচনের আনাং বিভক্তি যেখানে হিন্দিতে সংক্ষিপ্ত সানুনাসিকে পরিবর্তিত হইয়াছে, বাংলায় তাহার দ আকার ধারণ করিয়াছে এবং কৃতশব্দের অপভ্রংশ কের তাহার সহিত বাহুল্য প্রয়োগরূপে যুক্ত হইয়াছে।
তুলসীদাসে আছে, জীবহ্লকের কলেসা, এই জীবহ্লকের শব্দের রূপান্তর ‘জীবদিগের’ হওয়া কিছুই অসম্ভব নহে।
ন হইতে দ হওয়ার একটি দৃষ্টান্ত সকলেই অবগত আছেন, বানর হইতে বান্দর ও বাঁঁদর।
কর্মকারকে জীবহ্লকে হইতে জীবদিগে শব্দের উদ্ভব হওয়া স্বাভাবিক। আমাদের নূতন সৃষ্ট বাংলায় আমরা কর্মকারকে দিগকে লিখিয়া থাকি, কিন্তু কথিত ভাষায় মনোযোগ দিলে কর্মকারকে দিগে শব্দের প্রয়োগ অনেক স্থলেই শুনা যায়।
বোধ হয় সকলেই লক্ষ করিয়া থাকিবেন, সাধারণ লোকদের মধ্যে— আমাগের তোমাগের শব্দ প্রচলিত আছে। এরূপ প্রয়োগ বাংলার কোনো বিশেষ প্রদেশে বদ্ধ কি না বলিতে পারি না, কিন্তু নিম্নশ্রেণীর লোকদের মুখে বারবার শুনা গিয়াছে, ইহা নিশ্চয়। আমাগের তোমাগের শব্দের মধ্যস্থলে আসিবার প্রয়োজন হয় নাই: কারণ, ম সানুনাসিক বর্ণ হওয়াতে পার্শ্ববর্তী সাহসিককে সহজে আত্মসাৎ করিয়া লইয়াছে। যাগের তাগের শব্দ ব্যবহার করিতে শুনা যায় নাই।