পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩৮
বাংলা শব্দতত্ত্ব

তাহা পূর্বে বলা হইয়াছে, কেবল মাড়োয়ারি ও মেৱারি য়ো বিভক্তি বাংলার র বিভক্তির সহিত সাদৃশ্যবান। এ-কথাও বলা আবশ্যক উড়িয়া ও আসামি ভাষার সহিতও এ-সম্বন্ধে বাংলার প্রভেদ নাই। অপরাপর গৌড়ীয় ভাষায় কা প্রভৃতি যোগে ষষ্ঠী বিভক্তি হয়।

  কিন্তু একটি বিষয় বিশেষরূপ লক্ষ করিবার আছে।

  উত্তম পুরুষ এবং মধ্যম পুরুষ সর্বনাম শব্দে কী একবচনে কী বহুবচনে প্রায় কোথাও ষষ্ঠীতে ককারের প্রয়োগ নাই, প্রায় সর্বত্রই রকার ব্যবহৃত হইয়াছে; যথা, সাধুহিন্দি—একবচনে মেরা, বহুবচনে হমারা। কনৌজি—মেরো, হমারো। ব্রজভাষা—মেরৌ, হমারৌ। মাড়োয়ারি—মারো, হ্মারো। মেৱারি—হ্মারো, হ্নাঁঁৱরাঁঁরো। অৱধি—মোর, হমার। রিৱাই—ম্‌ৱার, হম্‌হার।

  মধ্যম পুরুষেও—তেরা তুম্‌হরা তোর তুমার, ত্‌ৱার তুম্‌হার প্রভৃতি প্রচলিত।

  কোনো কোনো ভাষায় বহুবচনে কিঞ্চিৎ প্রভেদ দেখা যায়; যথা, নেপালি—হামেরুকো, ভোজপুরি—হমরণকে, মাগধী—হমরণীকে, মৈথিল— হমরাসভকে।

  অন্য গৌড়ীয় ভাষায় কেবল সর্বনামের ষষ্ঠী বিভক্তিতে যে রকার বর্তমান, বাংলায় তাহা সর্বনাম ও বিশেষ্যে সর্বত্রই বর্তমান। ইহা হইতে অনুমান করি, ককার অপেক্ষা রকার যষ্ঠী বিভক্তির প্রাচীনতর রূপ।

  এখানে আর-একটি লক্ষ করিবার বিষয় আছে। একবচনে যেখানে তেরা বহুবচনে সেখানে তুম্‌হরা, একবচনে ম্‌ৱার বহুবচনে হম্‌হার। নেপালি ভাষায় কর্তৃকারক বহুবচনে হেরু বিভক্তি পাওয়া যায়; এই হেরু হার এবং হরা সাদৃশ্যবান।

  কিন্তু নেপালিতে হেরু নাকি কর্তৃকারক বহুবচনে ব্যবহার হয়, এইজন্য সম্বন্ধে রকারের পরে পুনশ্চ কার-যোগ সম্ভব হয় নাই, কো শব্দযোগে ষষ্ঠী করিতে হইয়াছে। অথচ নেপালি একবচনে মেরো হইয়া থাকে।

  মৈথিলী ষষ্ঠীর বহুবচনে হমরাসভকে সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ বক্তব্য আছে।

  পূর্বে বলিয়াছি বাংলায় কর্তৃকারক বহুবচনে সব শব্দের পূর্বে বহুবচনবাচক না বিভক্তি বলে, যথা ছেলেরা সব; কি মৈথিলীতে শুষ্ক নেনাসভ বলিতেই বালকেরা সব বুঝায়। পূর্বে একথাও বলিয়াছি এ-সন্বন্ধে মৈথিলীর সহিত