পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
বাংলা শব্দতত্ত্ব

 এই ক প্রত্যয় বিশেষণেই অধিক, এবং দুই-অক্ষরের ছোটো ছোটো কথাতেই ইহার প্রয়োগসম্ভাবনা বেশি। কারণ, বড়ো কথাকে ক সংঘোগে বৃহত্তর করিলে তাহা ব্যবহারের পক্ষে কঠিন হয়। এইজন্যই বাংলা দুই-অক্ষরের বিশেষণ যাহা অকারান্ত হওয়া উচিত ছিল তাহা অধিকাংশই আকারান্ত। যে-সকল বিশেষণ শব্দ দুই-অক্ষরকে অতিক্রম করিয়াছে তাহাদের ঈষৎ ভিন্নরূপ বিকৃতি হইয়াছে; যথা, পাঠকক হইতে পড়ুয়া ও তাহা হইতে পোড়ো, পতিতক হইতে পড়ুয়া ও পোড়ো, মধ্যমক—মেঝুয়া মেঝো, উচ্ছিষ্টক—এঁঠুয়া এঁঠো, জলীয়ক—জলুয়া জোলো, কাষ্ঠিয়ক-কাইয়া কেঠো ইত্যাদি। অনুরূপ দুই-একটি বিশেষ পদ যাহা মনে পড়িল তাহা লিখি। কিঞ্চিলিক শব্দ হইতে কেঁচুয়া ও কেঁচো হইয়াছে। স্বাক্ষরক পেচক শব্দ হইতে পেঁচা ও বহুবরক কিঞ্চিলিক হইতে কেঁচো শব্দের উৎপত্তি তুলনা করা যাইতে পারে। দীপক শব্দ হইতে দেখুয়া ও দেখো আর-একটি দৃষ্টান্ত।

 বাংলা বিশেষণ সম্বন্ধে আলোচ্য বিষয় অনেক আছে, এ স্থলে তাহার বিস্তারিত অবতারণা অপ্রাসঙ্গিক হইবে।

 বীম্‌স্ সাহেব বাংলা উচ্চারণের একটি নিয়ম উল্লেখ করিয়াছেন; তিনি বলেন চলিত কথায় আকারের পর ঈ স্বর থাকিলে সাধারণত উভয়ে সংকুচিত হইয়া এ হইয়া যায়। উদাহরণস্বরূপে দিয়াছেন, খাইতে-খেতে, পাইতে পেতে। এইসঙ্গে বলিয়াছেন, in less common words অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত অপ্রচলিত শব্দে এইরূপ সংকোচ ঘটে না; যথা, গাইতে হইতে গেতে হয় না।

 গাইতে শব্দ খাইতে ও পাইতে শব্দ হইতে অপেক্ষাকৃত অপ্রচলিত বলিয়া কেন গণ্য হইবে বুঝা যায় না। তাহার অপরাধের মধ্যে সে একটি নিয়ম-বিশেষের মধ্যে ধরা দেয় না। কিন্তু তাহার সমান অপরাধী আয়ো মিলিবে। বাংলায় এই-জাতীয় ক্রিয়াপদ যে-কয়টি আছে, সবগুলি একত্র করা যাক। খাইতে গাইতে চাইতে ছাইতে ধাইতে নাইতে পাইতে বাইতে ও যাইতে। এই নয়টির মধ্যে কেবল খাইতে পাইতে ও যাইতে, এই তিনটি শব্দ বীম সাহেবের নিয়ম পালন করে, বাকি ছয়টি অষ্ণ নিয়মে চলে।

 এই ছয়টির মধ্যে চারিটি শব্দের মাঝখানে একটা হলুপ্ত হইয়াছে দেখা যায়; যথা, গাহিতে চাহিতে নাহিতে ও বাহিতে (বহন করিতে)।