পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বীম্‌সের বাংলা ব্যাকরণ
৫৯

 হ আশ্রয় করিয়া যে ইকারগুলি আছে তাহার বল অধিক দেখা যাইতেছে। ইহার অনুকূল অপর দৃষ্টান্ত আছে। করিতে চলিতে প্রভৃতি শব্দে ইকার লোপ হইয়া করতে চলতে হয়; হইতে শব্দের ইকার লোপ হইয়া ‘হতে’ এবং লইতে শব্দের ইকার স্থানভ্রষ্ট হইয়া ‘নিতে’ হয়। কিন্তু, বহিতে সহিতে কহিতে শব্দের ইকার বইতে সইতে কইতে শব্দের মধ্যে টিকিয়া যায়। অথচ সমস্ত বর্ণমালায় হ ব্যতীত আর কোনো অক্ষরের এরূপ ক্ষমতা নাই।

 লইতে শব্দ লভিতে শব্দ হইতে উৎপন্ন; ভ হ-এ পরিণত হইয়া ‘লহিতে’ হয়। তদুৎপন্ন নিতে শব্দে ইকার যদিচ স্থানচ্যুত হইয়াছে তথাপি হ-এর জোরে টিঁঁকিয়া গেছে।

 বীম্‌স্ তাঁঁহার উল্লিখিত নিয়মে একটা কথা বলেন নাই। তাহার নিয়ম দুই-অক্ষরের কথায় খাটে না। হাতি শব্দে কোনো পরিবর্তন হয় না, কিন্তু হাতিয়ার শব্দের বিকারে হেতের হয়। আসি শব্দ ঠিক থাকে; ‘আসিয়া’ হয়—আস্যা, পরে হয়—এসে। খাই শব্দে পরিবর্তন হয় না; খাইয়া হয়। খ্যায়া, পরে হয়—খেয়ে। এইরূপে হাঁড়িশাল হইতে হয়—হেঁশেল।

 এ স্থলে এই নিয়মের চূড়ান্ত পর্যালোচনা হইল না; আমরা কেবল পাঠক-দের মনোযোগ আকৰ্ষণ করিলাম।

 ‘এ’ স্বরবর্ণ কোথাও বা ইংরেজি came শব্দস্থিত a স্বরের মতো, কোথাও বা lack শব্দের a-র মতো উচ্চারিত হয়, বীম্‌স্ তাহাও নির্দেশ করিয়াছেন। ‘এ’ কারের উচ্চারণবৈচিত্র্য সম্বন্ধে আমরা সাধনা পত্রিকায় আলোচনা করিয়াছি। বীম সাহেব লিখিয়াছেন, যাওয়া-সম্বন্ধীয় ক্রিয়াপদ গেল শব্দের উচ্চারণ গ্যাল হইয়াছে, গিলিবার সন্ধীয় ক্রিয়াপদ গেল শব্দের উচ্চারণে বিশুদ্ধ একার রক্ষিত হইয়াছে। তিনি বলেন অভ্যাস ব্যতীত ইহার নির্ণয়ের অন্য উপায় নাই। কিন্তু এই ক্রিয়াপদগুলি সম্বন্ধে একটি সহজ নিয়ম আছে।

 যে-সকল ক্রিয়াপদের আরম্ভ-শব্দে ইকার আছে, যথা, গিল মিল ইত্যাদি, তাহারা ইকারের পরিবর্তে একার গ্রহণ করিলে একারের উচ্চারণ বিশুদ্ধ থাকে; যথা, গিলন হইতে গেলা, মিলন হইতে মেলা (মেলন শব্দ হইতে যে মেলার উৎপত্তি তাহার উচ্চারণ ম্যালা), লিখন হইতে লেখা, শিক্ষণ হইতে শেখা ইত্যাদি। অন্য সর্বত্রই একারের উচ্চাণ অ্যা হইয়া যায়; যথা, খেলন—খেলা, ঠেলন-ঠেলা, দেখন-দেখা ইত্যাদি। অর্থাৎ গোড়ায় যেখানে