পাতা:বাংলা শব্দতত্ত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
উপসর্গ-সমালােচনা
৬৩

লইতে হয়, নয়তো বিতর্কের মধ্যেই থাকিতে হয়। দুর্গাদাস সং উপসর্গের নানা অর্থের মধ্যে ‘ঔচিত্য’ অর্থ নিদর্শন করিয়াছেন। অবশ্য সমুচিত শব্দের বারা ঔচিত্য ব্যক্ত হয়, সে কথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তাহাতে সং উপসর্গের ঔচিত্য অর্থ সূচনা করে না। সংগতি, সমীচীনতা, সমীকারিতা, সমস প্রভৃতি শব্দের অভ্যন্তরে ইঙ্গিতে যে ঔচিত্যের ভাব আছে, সং উপসর্গই তাহার মুখ্য ও মূল কারণ নহে। এরূপ বিচার করিতে গেলে উপসর্গের অর্থের অল্প পাওয়া যায় না; তাহা হইলে বলা যাইতে পারে সং উপসর্গের অর্থ সম্মান এবং প্রমাণস্বরূপ-সম্মান, সমাদ, সন্ত্র, সমভ্যর্থন প্রভৃতি উদাহরণ উপস্থিত করা যাইতে পারে। দুর্গাদাস সং উপসর্গের অর্থ সম্বন্ধে বলিয়াছেন, সম্প্রকার্ষাশ্লেষনৈরন্তর্রযৌচিত্যাভি মুখ্যেষু; এই আভিমুখ্য অর্থ স্পষ্টতই সং উপসর্গের বিশেষ অর্থ নহে—কারণ, সং উপসর্গের যে আশ্লেষ অর্থ দেওয়া হইয়াছে আভিমুখ্য তাহার একটি অংশ, বৈমূখ্যও তাহার মধ্যে আসিতে পারে। সমাবেশ, সমাগম, সংকুলতা বলিলে যে আশ্লেব বা একত্র হওন বুঝায় তাহার মধ্যে- আভিমুখ্য, বৈমুখ্য, উন্মুখতা অধোমুখতা, সমস্তই থাকিতে পারে; এ হলে বিশেষভাবে আভিমুখ্যের উল্লেখ করাতে অন্যগুলিকে নিরাকৃত করা হইয়াছে। যে-জনতায় নানা লোক নানা দিকে মুখ করিয়া আছে, এমনকি কেহ কাহারো অভিমুখে নাই তাহাকেও জনসমাগম বলা যায়; কারণ, সং উপসর্গের মূল অর্থ আযে, তাহার মধ্যে আভিমুখ্য থাকিলেও চলে না-থাকিলেও চলে। ইহাও দেখা যাইতেছে, উপসর্গ সম্বন্ধে প্রাচীন শব্দাচার্য্যদিগের অর্থতালিকায় পরস্পরের মধ্যে অনেক কমবেশি আছে। মেদিনী-কোষকার সং উপসর্গের যে ‘শোভনার্থ’ উল্লেখ করিয়াছেন দুর্গাদাসের টাকায় তাহা নাই; দুর্গাদাসের ঔচিত্য আভিমুখ্য অর্থ মেদিনী-কোষে দেখা যায় না। এই-সকল শব্দাচার্যের অগাধ পাণ্ডিত্য ও কুশাগ্রবুদ্ধিতা সম্বন্ধে আমাদের সন্দেহ মাত্র নাই; কিন্তু তাহাদের সিদ্ধান্ত আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত প্রণালীর দ্বারা পরীক্ষা করা কর্তব্য, এ-সম্বওে সংশয় করা উচিত নহে।

  প্রাচীন শাচার্যগণ সম্বন্ধে সমালোচক মহাশয় বলিতেছেন, ‘তাঁঁহারা কি প্রবন্ধকারের ন্যায় এক-একটি উপসর্গের সর্বত্রই একরূপ অর্থ হইবে, ইহা স্বীকার করেন না।’ প্রবন্ধকারও কোথাও তাহা স্বীকার কয়েন নাই। তিনি উপসর্গগুলির মূল অর্থ সন্ধান করিয়াছেন এবং সেই এক অর্থ হইতে নানা